পুলিশের নির্দেশ অমান্য করলেই গুলি। শ্যুট এট সাইটের অর্ডার দিয়েও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের আটকাতে পারছেন না শেহবাজ শরিফের সরকার। রাজধানী ইসলামাবাদের রেড জোন নামে পরিচিত উচ্চ সুরক্ষিত ডি চকে পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে সরকারি ভবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছেন পিটিআই সমর্থকরা। ২৪৫ ধারা জারি করে রেড জোনে সেনা মোতায়ন করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, বন্ধ আছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
যদিও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লকডাউন আর ক্র্যাক ডাউনের পথে হাঁটতে গিয়ে একের পর এক আত্মঘাতী গোল দিচ্ছে শেহবাজ শরিফ প্রশাসন। চলতি বছর মার্চে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশে চলমান অস্থিতিশীলতা দূর করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শেহবাজ, অক্টোবরের পর সেই ম্যান্ডেট থেকে সরে আসতে হয়েছে বর্তমান প্রশাসনকে। আগস্ট থেকে শুরু হওয়া পিটিআই সমর্থকদের কর্মসূচি ছাড়াও একাধিক সশস্ত্র সংগঠনের অপতৎপরতায় দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও একবার প্রশ্নবিদ্ধ। তাই প্রশাসন যদি বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফেরাতে না পারে, সেটাকে ইমরান সমর্থকদের অর্জন হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে পাকিস্তান। যার প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে। বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজের সুযোগ ভেস্তে গেছে নিরাপত্তা ইস্যুতে। কারাবন্দি ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে চলমান কারণে অস্থিরতা, লকডাউন বা ইন্টারনেট বন্ধের কারণে পাকিস্তান ও এর বর্তমান প্রশাসনের ভাবমূর্তি বিশ্ব পরিমণ্ডলে আরও ক্ষুণ্ন হতে চলেছে- এমন আশঙ্কাও করছেন বিশ্লেষকরা।
স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারে একধরণের সেন্সরশিপ আনা ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়া ও সমাবেশ বন্ধের কারণে পাকিস্তানের জনগণের বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার খর্বিত হচ্ছে বলে মনে করছে সচেতন নাগরিক সমাজ। তাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই দায় এড়াতে পারবেন না।
দেশের অর্ধেক মানুষকে কারাবন্দি করা কিংবা বন্দুকের ভয় দেখিয়ে চলমান আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা, কোনো সমাধান নয় বলেও দাবি করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আলোচনা ও সহনশীল আচরণ ছাড়া রক্তপাত বন্ধের দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই। বিশেষ করে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকের ওপর গুলি চালাবে না- ইসলামাবাদ যখন এই বার্তা দিচ্ছে, তখন ধরে নিতে হবে আলোচনার এটাই উপযুক্ত সময়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক চৌধুরী গোলাম হোসেন বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছেন আর যারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন, তারা একে অপরের শত্রু নন। বিক্ষোভকারীরা 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' বলে স্লোগানও দিয়েছেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সাফ জানিয়েছে, তারা নিজ দেশের মানুষের সামনে অস্ত্র তুলবে না, তাদের কোনো ক্ষতি করবে না। দুপক্ষকেই বলতে চাই, এই সুযোগ কাজে লাগান, আলোচনায় বসুন।’
এদিকে, হোয়াইট হাউজের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং-এ পাকিস্তান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, শুধু পাকিস্তান নয় পুরো বিশ্বের মানুষের বাক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার যেন অক্ষুণ্ন থাকে- এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সোচ্চার। বাংলাদেশের মতো পাকিস্তান সরকারের পরিণতিও একই দিকে এগোচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ওয়াশিংটন প্রত্যাশা করে, মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে ইসলামাবাদ কোনো গাফিলতি করবে না।
ভোট কারচুপি, রাজনৈতিক গ্রেপ্তার ও সংবিধানের ২৬ তম সংশোধনীর প্রতিবাদে কারাবন্দি ইমরান খান ১৩ নভেম্বর যে বিক্ষোভের ডাক দেন, সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ২৪ নভেম্বর থেকে ইসলামাবাদে জড়ো হচ্ছেন ইমরান সমর্থকরা। গণ মানুষের এই জোয়ার যেভাবে ফুলেফেঁপে উঠছে তাতে করে কতটা গভীর জলে পড়তে যাচ্ছে শেহবাজ শরিফ সরকার- সেদিকেই এখন নজর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের।