ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

‘রাশিয়ার কাছে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে’

যে নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে হামলা করা হয়েছে, সেই মিসাইল বিশ্বের অন্য কোনো দেশের কাছে নেই। তাই এটি ভূপাতিত করার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কোনো দেশেরই নেই। শব্দের চেয়ে ১০ গুণ দ্রুতগতির এই মিসাইলের রেঞ্জ ৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। ইউক্রেনে মিসাইল পরীক্ষা করে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আরও পরীক্ষা করা হবে এই ক্ষেপণাস্ত্র। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পুরো ইউরোপের যেকোনো স্থানে হামলা করা সম্ভব।

শুক্রবার পুতিন বলেন, আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নয়, হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতেই ইউক্রেনে হামলা করা হয়েছে। শনিবার বললেন, শক্তিশালী এই ক্ষেপণাস্ত্র ওরেশনিকের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে রাশিয়ার কাছে। পরীক্ষা সফল হওয়ায় এই হাইপারসনিক মিসাইল আরও বেশি উৎপাদন করা হবে। নতুন মিসাইল ইউক্রেনে ছুড়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন পুতিন।

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছি আমরা। আমাদের এই মিসাইলের মজুত আছে। আরও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবো আমরা। পুরোনো সোভিয়েত সিস্টেমের নতুন মডেল ওরেশনিক। অনেক আধুনিকতার ছোঁয়া আছে এই ক্ষেপণাস্ত্রে। দেশের ওপর যেকোনো চাপ আসলে আমরা এই ওরেশনিক ব্যবহার করবো। এই ক্ষেপণাস্ত্র কেউ ভূপাতিত করতে পারবে না।’

ইউক্রেনের নিপ্রো শহরে মধ্যমপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার পর পুতিন বলেন, এখন এই শক্তিশালী মিসাইল ব্যবহারের উপযোগী হয়ে গেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা ইউক্রেনের পক্ষে সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতে এই ক্ষেপণাস্ত্র আরও পরীক্ষা করা হবে বলেও জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখণ্ডে হামলার পর এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে ছুড়েছে পুতিনের সেনাবাহিনী।

প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘এই কথা বলতে চাই, কোনো দেশের কাছে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নেই। অন্য দেশের কাছে যতদিনে আসবে, ততদিনে এই মিসাইল আমরা আরও উন্নত করে ফেলবো। এই মিসাইল ভূপাতিত করার কোনো প্রযুক্তি এখনও আসেনি। এটা আমরা পরীক্ষা করতে থাকবো। অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় এটি বেশ শক্তিশালী।’

জোর দিয়ে পুতিন বলেন, ‘কোনো দেশ এখনও এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেনি, তাই কোন দেশের কাছেই এই মিসাইল ভূপাতিত করার কোন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাই এই মিসাইলকে অন্যগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রম করে রেখেছে।’ দেশের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে যেকোনো সময় এই মিসাইল পরীক্ষা করবেন বলেও জানান পুতিন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পুতিন পশ্চিমাদের জানান দিলেন, তিনি চাইলেই পরমাণু হামলা করতে পারেন। আতাকামাস কিংবা স্টর্ম শ্যাডোকে ভয় পায় না রাশিয়া। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন তিনি। দুই পক্ষ যুদ্ধ শেষ করতে চাইলেও অপেক্ষা করছেন ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তন নিয়ে।

সামরিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল জেমস স্পাইডার মার্কস বলেন,‘দুই দেশই ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণকে সামনে রেখে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণে ব্যস্ত। আগামী কয়েকমাস সংঘাত বাড়বে। ইউক্রেন বোঝাতে চাইছে ট্রাম্পের সাহায্য প্রয়োজন, পুতিনও এই যুদ্ধ শেষ করতে চায়। দুই পক্ষই চাইছে দ্রুত ট্রাম্প এই যুদ্ধ বন্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিক।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পরমাণু হামলা করা যায় কিনা, যে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত না কেউ। যে কারণে ন্যাটোর কাছে আরও বেশি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অনুরোধ করা উচিত ইউক্রেনের। নতুন আর সংস্করণ করা এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউরোপে হামলা করতেও সক্ষম। রাশিয়া স্থল, জল আর আকাশপথে হামলার জন্য সব সক্ষমতা কয়েক বছরে অর্জন করে ফেলেছে। ইউক্রেন দখল ছাড়া এই যুদ্ধ শেষ করবে না রাশিয়া।

সামরিক বিশ্লেষক মারিয়ানা বুদজেরিন বলেন, ‘অবশ্যই ইউক্রেনের এখন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চাওয়া উচিত। ইউক্রেন এখন ভয়াবহ সময় পার করছে। শুধু ওরেশনিকের জন্য না, অন্য সব মিসাইলের জন্য। কারণ রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করতে অনেক মিসাইল ব্যবহার করছে, এরমধ্যে রয়েছে কিনঝাল, এসকান্দার, ক্যালিবার মিসাইল। তবে ওরেশনিক পরমাণু শক্তিধর মিসাইল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পুতিন চাইছে প্রমাণ করতে, যে পরমাণু হামলা সক্ষমতা তাদের আছে।’

এত আলোচনার কেন্দ্র এই ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র আসলে কি? পুতিনের দাবি, এই মিসাইল সেকেন্ডে আড়াই থেকে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। তাই একে প্রতিরোধ করার কোন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বে তৈরি হয়নি। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এটি নতুন ধরনের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। রাশিয়ার আস্ত্রাখান থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে মাত্র ১৫ মিনিটে এসে পড়েছে। রুশ সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ আড়াই থেকে ৩ হাজার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। এই মিসাইল দিয়ে হামলা করা যাবে ইউরোপের যেকোনো স্থানে, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত যেতে পারবে না। তবে এটিকে আইসিবিএম বলতে নারাজ পুতিন।

এএম