দেশে এখন
0

দুই বছর ধরে মর্গে পড়ে আছে দুই ভারতীয়র মরদেহ

দীর্ঘ দুই বছর ধরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের হিমঘরে পরে আছে দুই ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ। বছরের পর বছর দুই ভিনদেশির মরদেহ ফ্রিজে পরে থাকায় সংরক্ষণেও তৈরি হয়েছে জটিলতা। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে কারাভোগ শেষে খালাস পাওয়া আরও ১৯ ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন শরীয়তপুর কারাগারে। এসব নাগরিকদের হস্তান্তরে দীর্ঘসূত্রতায় দেখা দিয়েছে জটিলতা।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মরদেহ রাখার হিমঘরে রাখা হয়েছে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় দুই নাগরিকের মরদেহ। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সতেন্দ্র কুমার আর ১৫ এপ্রিল মারা যান বাবুল সিং। হিমাগারে রাখা ভারতীয় এই দুই নাবিকের মরদেহের নিরাপত্তায় ২৪ ঘণ্টাই পাহারায় থাকছেন কারা কর্তৃপক্ষের প্রহরী।

২০২২ সালের ১৮ মে বাবুল সিং ও ৮ অক্টোবর সতেন্দ্র কুমারকে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা থেকে আটক করে জাজিরা ও পদ্মা দক্ষিণ থানা পুলিশ। দণ্ডপ্রাপ্ত দু'জনই শরীয়তপুর জেলা কারাগারে হাজতী ছিলেন। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ।

বিদেশি নাগরিক হওয়ায় মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। হাসপাতালের চারটি ফ্রিজের মধ্যে দু'টিতে দীর্ঘসময় ধরে মরদেহ দু'টি পড়ে থাকলেও বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় নতুন মরদেহ সংরক্ষণ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।

হিমাগারের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী বলেন, 'বাইরে থেকে কোনো লাশ আসলে, বা হাসপাতাল থেকে রাতবিরাতে কোনো লাশ আসলে আমরা এখানে রাখতে পারি না। চারটার বেশি হলে আমরা রাখতে পারি না। এক্ষেত্রে আমাদের খুব ভোগান্তি হয়।'

একজন কারাগারের প্রহরী বলেন, 'আমাদের এখানে ডিউটি করা অনেক মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। কারাগারেও ডিউটি করতে হয় আবার এখানেও ডিউটি করতে হয়। এই লাশ যতদিন পর্যন্ত আমরা বুঝিয়ে দিতে না পারবো ততোদিন পর্যন্ত আমাদের এখানে ডিউটি করতে হবে।'

অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গত দুই বছরে পদ্মা সেতুর আশপাশ থেকে আটক হয় ২২ ভারতীয় নাগরিক। তাদের মধ্যে দুইজন মারা গেলেও এখনও শরীয়তপুর জেলা কারাগারে রয়েছে চার নারীসহ আরও ১৯ জন। এছাড়া অসুস্থ আর একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন ঢাকায়। মুক্তি প্রাপ্ত আসামিদের কারাগারে রাখা এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন অন্যদিকে এসব আসামিদের রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় বলছেন আইনজীবীরা।

শরীয়তপুর জজ কোর্টের আইনজীবী মাসুদুর রহমান বলেন, 'যে আসামি হাজতে রয়েছে তারাও কিন্তু বিনা বিচারে এখন হাজতবাস করছেন। এটাও কিন্তু তার ব্যক্তিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি যে অপর দু'জন আসামি কারা হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, প্রতিটি লাশের পেছনে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে।'

এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে মরদেহ সংরক্ষণ করতে গিয়ে বিপাকে রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আকরাম এলাহী বলেন, 'আমাদের মোট চারটি হিমাগার, এর মধ্যে দু'টি হিমাগারে এই দুইটি লাশ দীর্ঘ দুই বছরের উপরে আটকে রেখেছে। যার কারণে নতুন যে লাশগুলো আসছে এগুলো আমরা সংরক্ষণ করতে রিম্বণায় পড়ি। সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ এই লাশগুলো ভারতে নেয়ার ব্যবস্থা করলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।'

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, মরদেহের সংরক্ষণ সরকারের আর্থিক ব্যয় আর খালাস প্রাপ্ত আসামিদের বছরের পর বছর কারাগারে রাখা জটিলতা। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

শরীয়তপুর কারাগারের জেলার আসমা আক্তার বলেন, 'এদের তো সাজাভোগ শেষ। এখন সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তবেই আমরা এদের ছাড়তে পারবো। বর্তমানে যারা আছে, তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য আমরা চিঠি লিখেছি। এটার জন্যে হালনাগাদ তথ্যও আমরা প্রেরণ করছি। কিন্তু এখনও এর কোনো উত্তর আসেনি আমাদের কাছে।'

দুই বিদেশি নাগরিকের মরদেহ সংরক্ষণ করতে এ পর্যন্ত খরচ প্রায় ২৩ লাখ টাকা। যার মধ্যে নয় লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

এসএস