বিশেষ প্রতিবেদন , পরিষেবা
অর্থনীতি
0

আধুনিক ল্যান্ডিং সিস্টেমে যাচ্ছে শাহজালাল, কুয়াশাতেও সহজ হবে ফ্লাইট ওঠানামা

আধুনিক ল্যান্ডিং সিস্টেমে যাচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দর। আইএলএস ক্যাটাগরি ওয়ান থেকে টুতে উন্নীত হচ্ছে। ৩০০ মিটার ভিজিবিলিটিতেই নামতে পারবে উড়োজাহাজ। আগে যেটার জন্য লাগতো কমপক্ষে ৬০০ মিটার। আর আধুনিক এই সিস্টেমে ঘন কুয়াশাতেও সহজ হবে ফ্লাইট ওঠানামা। কমে আসবে ফ্লাইট ডাইভারশন। সঙ্গে পুরো শীতকালে পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বেবিচকের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের এয়ারলাইন্সগুলো।

শীত এলেই এমন কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দেখা যায় না কয়েক হাত দূরের রানওয়েও। তাপমাত্রার পারদ নামার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে আকাশ চলাচলে ভোগান্তি।

ঘন কুয়াশায় অবতরণ করতে না পারা উড়োজাহাজগুলোকে গিয়ে নামতে হয় মিয়ানমার কিংবা ভারতের কোন বিমানবন্দরে। উড্ডয়নের জন্যও সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর তাতেই শিডিউল বিপর্যয়। এয়ারলাইন্সের বাড়ে খরচ, ভোগান্তি বাড়ে যাত্রীর।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আধুনিক ল্যান্ডিং সিস্টেম না থাকায় এই ভোগান্তি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম ক্যাটাগরি ওয়ান। তাতে একটি উড়োজাহাজ অবতরণের জন্য কমপক্ষে ৬০০ মিটার ভিজিবিলিটির প্রয়োজন হয়। শীতের কুয়াশায় সেই শর্ত পূরণ না হওয়ায় হরহামেশাই ঢাকার ফ্লাইট ডাইভার্ট করতে হয় অন্য বিমানবন্দরে। এয়ারলাইন্সগুলোর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে গেল সরকারের সময়ে আইএলএস ক্যাটাগরি ওয়ান থেকে টু তে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েও আধুনিক করা হয়নি এই সেবা।

তবে এবার সত্যিই ক্যাটাগরি টু তে উন্নীত হচ্ছে শাহজালালের ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম। ইতোমধ্যেই দুদফায় শেষ হয়েছে রানওয়ে সংস্কারের কাজ। লাইটিং ও ইলেকট্রিক সিস্টেমের কাজও শেষ। এখন শুধু অপেক্ষা টেস্ট ফ্লাইটের। বেবিচক বলছে, দ্রুতই ক্যালিব্রেশন শেষ করে ডিসেম্বর মাঝামাঝিতেই আসবে আইএলএস ক্যাটাগরি টু এর চূড়ান্ত ঘোষণা।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘ আমাদের পরিকল্পনা ছিল নভেম্বরের সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করার,তবে ক্যালিব্রেশন ফ্লাইটে শিডিউল রয়েছে। তাই উনাদের শিডিউলটা আমরা ডিসেম্বর ৮ তারিখের আগে পাচ্ছি না। আমরা কাজটা নভেম্বরের মধ্যে আনার চেষ্টা করছি, যদি তা করতে পারি, তাহলে নভেম্বরের শেষে না হয় ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো। মোটামুটি সব রেডি হয়ে গেছে এখন শুধু ক্যালিব্রেশন ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা।’

তাতে রানওয়ে ভিজিবিলিটি নেমে আসবে ৬০০ থেকে ৩০০ মিটারে। এতেও যদি ফ্লাইট নামতে না পারে তার জন্য সপ্তাহের ৪ দিন চট্টগ্রামের শাহ আমানত আর ৩ দিন সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখবে বেবিচক। শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক বলছেন, আইএলএস ক্যাটাগরি টু তে উন্নীত হলে ঘন কুয়াশাতেও সহজ হবে ফ্লাইট উঠানামা। কমে আসবে ফ্লাইট ডাইভারশন।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলেন,  ‘ঘন কুয়াশার মৌসুমেও আইএলএস ওয়ান থেকে আইএলএস টু ডাইভারশন অনেক কমে যাবে। এরই সঙ্গে আমাদের যেসব ডাইভারশন অল্টারনেটিভ এয়ারফিল্ড রয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেটে সেগুলো খোলা থাকবে। আমরা আশা করছি আমাদের ডাইভারশনগুলো কমে যাবে। ৩০০ থেকে ৩৫০ মিটার পর্যন্ত ভিজিবিলিটি থাকলেও আমাদের এয়ারক্রাফটগুলো নামতে পারবে। তবে যদি এর চেয়ে কম ভিজিবিলিটি  থাকলে আমাদের ফ্লাইটগুলোকে ডাইভারট করতে হতে পারে।’

দেরিতে হলেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের এয়ারলাইন্সগুলো।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম মহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমরা এই উদ্যোগকে পজিটিভ হিসেবে দেখছি, কারণ এটা হলে আমাদের ব্র্যান্ডিং ইমেজ ও ব্যবসার ওপর যে নেতিবাচক প্রভাবটা পড়েছে, সেটা থেকে অদূর ভবিষ্যতে মুক্ত হবার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’

এয়ার অ্যাস্ট্রা সিইও ইমরান আসিফ বলেন, ‘ওয়ান থেকে টু ক্যাটাগরিতে যাওয়ার ফলে আমাদের উপকার হবে, এর ফলে ট্র্যাফিক ডাইভারশন কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে আশা করছি।’

নভোএয়ারের এমডি গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) মফিজুর রহমান বলেন ‘আপাতত ক্যাটাগরি টু হলেও বাহিরে যেসব বড় এয়ারলাইনগুলো আসে বিশেষ করে যারা মিড নাইটে অপারেশন করে থাকে তাদের জন্য খুব ভালো হবে।’

যদিও ২ ক্যাটাগরিতে থেমে না থেকে থার্ড টার্মিনালের অপারেশনের সাথেই শাহজালাল বিমানবন্দরের আইএলএস ক্যাটাগরি ৩ এ উন্নীত করার পরামর্শ অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখন আইএলএস থ্রিতে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত কারণ আরো কুয়াশাপূর্ণ আবহাওয়ায় কিন্তু এয়ারক্রাফট ডাইভারট করতেই হবে।’

এএম