দেশে এখন
0

শাহজালাল বিমানবন্দরে বসেছে অত্যাধুনিক রাডার

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসেছে ফ্রান্সের থ্যালাস কোম্পানির অত্যাধুনিক রাডার। প্রায় ৭০০ কোটি টাকার এই রাডার দেশের আকাশসীমার পাশাপাশি নজরদারি করতে পারবে সমুদ্রসীমায়ও। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে নতুন এই রাডার দেশের আকাশ নিরাপদ করার পাশাপাশি বাড়াবে রাজস্ব।

ভৌগোলিক কারণে আকাশ চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য ৫৭ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সের কমপক্ষে ৬০০টি ফ্লাইট ব্যবহার করছে বাংলাদেশের আকাশ।

বাংলাদেশের ফ্লাইট ইনফরমেশন রিজিওনে বা এফআইআরে অন্য দেশের উড়োজাহাজের উপস্থিতি সবার আগে ধরা পরে রাডারে। যা থেকে বের করা হয় সেই ফ্লাইটের অবস্থান ও গন্তব্য। জরুরি প্রয়োজনে করা হয় যোগাযোগ।

আকাশসীমা ব্যবহার করা এসব ফ্লাইটকে গতিপথ, উচ্চতা, আবহাওয়াসহ রুট নেভিগেশনের যাবতীয় সেবা দেয় সিভিল এভিয়েশন। যা বাবদ উড়োজাহাজ ভেদে আয় হয় ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো একমাত্র রাডার দিয়ে এতোদিন সেসব কাজ চালিয়ে এসেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে সময়ের সঙ্গে ৪০ বছরের পুরনো এই রাডারের কমেছে কার্যক্ষমতা। তাই আওতার বাইরে থাকা আকাশপথে কোন বিমান উড়ে গেলে তা চিহ্নিত করতে পারছে না সিভিল এভিয়েশন। নেয়া হচ্ছে প্রতিবেশি দেশের সহযোগিতা।

বেবিচক'র চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেন, 'আমাদের আকাশসীমায় পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাটা কম ছিল। তাই আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এই ট্রাফিকটাকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। আমরা পুরো আকাশসীমা পাচ্ছি না দেখেই তো নতুন রাডারে যাচ্ছি।'

৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই রাডার ইতোমধ্যেই সিগন্যাল দিতে শুরু করেছে

ফ্রান্সের থ্যালাস কোম্পানির অত্যাধুনিক রাডার স্থাপনে ২০২১ সালের অক্টোবরে চুক্তি হয়েছিল। বেবিচকের নিজস্ব অর্থায়নে কেনা রাডারটি ইতোমধ্যেই সিগন্যাল দেয়া-নেয়া করছে। রাডার প্রকল্পে থাকছে সার্ভিল্যান্স, অটোমেশন ও ভয়েস কমিউনিকেশন সিস্টেম। রাডারটি পুরোপুরি চালু হলে দেশের আকাশপথ হবে অন্যতম নিরাপদ বিমান চলাচলের রুট। এতে বাড়বে রাজস্ব।

বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, 'এই রাডারটির ব্যবস্থাপনা আমরা অটোমেশনের মাধ্যমে পাচ্ছি; এতে বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রামের উপরে আরও অধিক পরিমাণ বিমানকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। এটা অনেক আধুনিক ব্যবস্থাপনা। এতে আমাদের যেমন সক্ষমতা বাড়ছে তেমনি ভবিষ্যতে উপার্জনও বাড়বে।'

দেশের আকাশসীমা হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গোপসাগরের ওপর আন্তর্জাতিক রুটের একটি অংশ ও দক্ষিণ সুন্দরবন ধরে বাংলাদেশের একটি অংশ কলকাতার এফআইআর নিয়ন্ত্রিত। এছাড়াও সেন্ট মার্টিনের একটি অংশ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পড়েছে ইয়াঙ্গুন এফআইআরের অধিনে।

দেশের আকাশপথ থেকে আয় বাড়াতে রাডারের সক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিভিল অ্যাভিয়েশনকে এফআইআর বা ফ্লাইট ইনফরমেশন রিজিওনও বড় করতে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অবঃ) এটিএম নজরুল ইসলাম। বলেন, 'এটা নিয়ন্ত্রণ করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন। আমাদেরকে তাদের পরিকল্পনায় যেতে হবে। তখন এটা হয়তো আমাদের সাথে একটা সমন্বয় হবে।'

দেশের আকাশসীমার সঙ্গে সমুদ্রসীমায় নিজেদের এফআইআর প্রতিষ্ঠা করতে পারলে শুধু ফ্লাইওভার চার্জ বাবদ বছরে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।