১৯ বছর বয়সী অবনির নিষ্পলক চাহনি। এত অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস কেড়ে নিয়েছে তার দু'চোখের দৃষ্টি শক্তি!
৮ বছর বয়স থেকেই আক্রান্ত হলেও ১৮ বছর বয়সে এসে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন তরুণী হামিদা কাউসারীন অবনীর। ধীরে ধীরে যোগ হয়েছে হাই প্রেশার, কিডনি জটিলতা, পায়ে ব্যথা সহ নানা উপসর্গ।
মা সুলতানা নাসরিন জানালেন, ১ বছর ধরে নিয়মিত রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসতে হয় চিকিৎসার জন্য। মেয়েকে সুস্থ রাখতে ১ বছরেই খরচ করেছেন ৫ লাখ টাকা।
অসচেতনতার কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার পরও জানেন না অনেকেই। চিকিৎসকরা বলছেন বাবা মায়ের একজনের থাকলে ১০ শতাংশ এবং দুজনের থাকলে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি থাকে সন্তানের। এছাড়াও উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, ধূমপান ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশের গবেষণা বলছে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। নিয়মিত চিকিৎসা না করায় ইনসুলিন নেবার পরও ৮০ ভাগ রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ভুক্তভোগীর হাত পা চোখ কিডনি লিভারসহ সব অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি মানসিক অবসাদ বাড়াচ্ছে, কমাচ্ছে যৌন ক্ষমতাও।
সরকারিভাবে ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতিতে নিবন্ধিত রয়েছেন ৭০-৮০ লাখ রোগী। বাকি রোগীদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনতে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি মফস্বলেও নজর দেবার কথা বলছেন চিকিৎসকরা।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের একাডেমি পরিচালক মো. ফারুক পাঠান বলেন, ‘আমাদের শনাক্তের পদ্ধতিকে আরো জোরদার করতে হবে। ইউনিয়ন, থানা ও জেলা পর্যায়ে আমরা পৌঁছাতে চাই। তাই সবার মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’
জীবনের যে কোনো সময়ে, যে কোনো বয়সী মানুষই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন জানিয়ে মাঝে মাঝে রক্তের সুগার পরীক্ষার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনের পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
বিএসএমএমইউয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এখানে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খরচ কিন্তু খুব কম। অন্যদিকে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে সরকারের কাঠামো নেই। না থাকার কারণে সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারিরীক পরিশ্রম, খেলাধুলার জায়গা রাখতে হবে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিন্তু সে জায়গা নেই। পারিবারিকভাবে সেটি করতে হবে।’
ডায়াবেটিসের কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়। দেশের স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশই ব্যয় হয় এই রোগের চিকিৎসায়। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, ঘাটতি পূরণে নিরবচ্ছিন্নভাবে ওষুধ সাপ্লাই এবং দাম সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিত প্রসাদ বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি যে মূল্যমান এটা যেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। যখন ওষুধের দাম নাগালের বাইরে চলে যায় তখন মানুষ ওষুধ কিনে খেতে পারে না। তখন ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’
ধরে নেয়া হয় বাংলাদেশে ৩ কোটি ডায়াবেটিস রোগীর অর্ধেকই জানেন না তাদের আক্রান্তের খবর। অন্যদিকে যারা জানেন তাদের মধ্যে শুধু অর্ধেক চিকিৎসার আওতায় আছেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডায়াবেটিস রোগীদের খুঁজে বের করা এবং শনাক্তদের চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারি কার্যকরী ভূমিকা পালনের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।