এক সময় সর্বোচ্চ জাতীয় পতাকাবাহী জাহাজের মালিক ছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। নব্বইয়ের দশকে প্রতিষ্ঠানটির ৩৪টি জাহাজ থাকলেও ক্রমাগত লোকসান, অনিয়ম ও দূরদর্শিতার অভাবে কমে আসে সেই সংখ্যা। অন্যদিকে বড় হয়েছে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের জাহাজ বহর।
তবে ২০১৮ সালে নতুন ছয়টি জাহাজ পেয়ে প্রাণ ফিরে পায় বিএসসি। ফিরে আসে লাভের ধারায়। যদিও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে 'বাংলার সমৃদ্ধি' নামের একটি জাহাজ হারায় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া সবশেষ অগ্নিদুর্ঘটনার পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ৩৭ বছর পুরানো দু'টি অয়েল ট্যাংকার 'বাংলার জ্যোতি' ও 'সৌরভ'। বর্তমানে মাত্র পাঁচটি জাহাজ আছে প্রতিষ্ঠানটির। ২০১৮ সালে চীন থেকে চারটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনও ঋণ চুক্তি হয়নি। এ অবস্থায় সক্ষমতা বাড়ায় নিজস্ব অর্থেই জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
লোকসানের ঝুঁকি না থাকায় ৫৫ থেকে ৬৬ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার দু'টি বাল্ক কার্গো জাহাজ কিনবে শিপিং করপোরেশন। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, 'আমাদের স্টাফ টার্গেট অনুসালে আমরা এই মুহূর্তে দু'টি বাল্ক ক্যারিয়ার ৫৫ হাজার থেকে ৬৬ হাজার মেট্রিকটনের মধ্যে কিনতে চাচ্ছি।'
দ্রুত জাহাজ সংগ্রহ করতে সম্পূর্ণ নতুন না কিনে পাঁচ বছরের পুরানো বা বিশ্বের বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে বিক্রির জন্য প্রস্তুত আছে এমন জাহাজ কেনার কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি। ছয় মাসেই ক্রয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার টার্গেট কর্তৃপক্ষের।
কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, 'সাকসেসফুলি বিশ্বের সব মার্কেট এবং বিশ্বের মেরিটাইম সেক্টরে যে ইন্সপেকশনগুলো হয় তাতে কোয়ালিফাই করতে হবে। এবং যেকোনো পোর্টে যাওয়ার মতো যেন সক্ষমতা থাকে আমাদের সেই ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনা করেই আমরা এখন সারা বিশ্বের মার্কেট নিয়ে আমরা স্টাডি করছি।'
বর্তমানে পর্যাপ্ত দেশিয় জাহাজ না থাকায় পণ্য পরিবহনে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে বাইরে। এ অবস্থায় জাহাজের ভাড়া সাশ্রয় ও নাবিকদের চাকরির সুযোগ বাড়াতে দেশিয় জাহাজের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুব আনাম বলেন, 'নিজস্ব পতাকা থাকলে যতগুলো মেরিন অ্যাকাডেমি করা হয়েছে, এই ছেলেগুলো ট্রেইনড করে একটা সার্টিফিকেট দিয়ে গ্লোবাল মার্কেটে ছাড়া সম্ভব। তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা আসতে থাকবে। এটা হলো গ্লোবাল পলিসি।'
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে দেশিয় পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ১০৩টি। জাহাজ ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় বড় বড় শিল্প গ্রুপ জাহাজের বহর বাড়াচ্ছে। সবশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ৫৩ বছরে সর্বোচ্চ ২৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।