দেশে এখন
0

নির্মাণাধীন ভবনে ঝুলে থাকা সেই তরুণের বেঁচে ফেরার গল্প

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নির্মাণাধীন ভবনে এক তরুণের ঝুলে থাকার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দুই বিপথগামী পুলিশ সদস্যকে গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়। কেমন আছেন সে তরুণ? সে খবরই জানা যাবে এখন টেলিভিশনের এই প্রতিবেদনে।

নির্মাণাধীন ভবনের চারতলায় ঝুলে আছেন এক তরুণ। তাকে লক্ষ্য করে পর পর গুলি ছুঁড়ছে পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হওয়া এ দোকান কর্মীর নাম আমির হোসেন। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা আর কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা পরবর্তী সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপিতে রয়েছেন তিনি। জানালেন, ঘুমের মধ্যে আজও যা দু:স্বপ্ন হয়ে আসে তার। এখন টিভিকে জানালেন সে দিনের ভয়াবহতা।

আমির হোসেন বলেন, ‘পুলিশ দেখে বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুকেছি। তারপর আমি ভয়ে ছাদের উপর উঠলাম। তখন পুলিশ আমার পিছনে পিছনে ছাদের উপর চলে গেছে। ওদের দেখে আমি এক সাইডে রডে ধরে ঝুলে ছিলাম। প্রথমে একজন পুলিশ গুলি করে চলে গেছে, পরে আবার আরো একজন গুলি করে। দু'জনই চলে যাওয়ার আমি তিনতলার বারান্দাতে লাফ দিয়ে পড়ি। তখন আমি তিন ঘণ্টা পড়ে ছিলাম। পরে এক ডাক্তার শুনতে পায় আমার চিৎকার। পরে সে তিন-চারজনকে নিয়ে এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। সেখানে সেলাই-ব্যান্ডেজ করার পর আমাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠাইছে রাত ১২টার দিকে। ওখানে তিনদিন ছিলাম কোনো চিকিৎসাই পাইনি।’

এখন টিভির প্রতিবেদকের কাছে বিভীষিকাময় সে দিনের বর্ণনা দিচ্ছেন আমির হোসেন। ছবি: এখন টিভি

কয়েক ঘণ্টা পর আমিরকে উদ্ধার করাদের মধ্যে ছিলেন ডা. রাতুল। জানালেন, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন তিনি। দীর্ঘসময় পড়ে থাকায় শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেন তিনি নিজেই।

ফেমাস স্পেশালাইজড হসপিটালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রাতুল ইসলাম বলেন, ‘চারতলায় আমরা খোঁজাখুঁজির পর দেখতে পেলাম এখানে একটা মানুষ পড়ে আছে এবং গোঙ্গানির মতো আওয়াজ করছে। তার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল রঙ দেখা যাচ্ছিল, যেটা কাছে না গেলে বোঝা যাচ্ছিল না যে এটা রক্ত। ছয়টা গুলির মধ্যে পাঁচটা গুলির জায়গাকে আমরা সেলাই করতে পেরেছিলাম। আর একটা নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। তারপর আমাদের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ওনাকে আমরা ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছিয়ে দেই।’

জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন আমির। পথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। গোলাগুলির একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। ঠিক তখনি রামপুরার মেরাদিয়ার নির্মাণাধীন ভবনের চারতলায় গিয়ে আশ্রয় নেন আমির। দুই পুলিশ সদস্য তার পিছু নেয়, চালায় এ নির্মমতা।

বিপথগামী পুলিশের সদস্যরা তার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে বারবার নিচে লাফ দিতে বলেন। ঝুলে থাকার একপর্যায়ে ঝাঁপ দিয়ে এ তরুণ তৃতীয় তলায় পড়েন। এতে আঘাত লাগে শরীরের বিভিন্ন স্থানে। জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে আমিরের মতো এমন অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি সেবা নিতে সিআরপি'তে আসছেন।

সিআরপির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. রবিউল আলম বলেন, ‘মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে উনাদের হাত-পা পুরোটাই প্যারালাইজড। এদের ক্ষেত্রে সুস্থতা কতটুকু আসবে তা এখনও বলার মতো সময় হয়নি। হয়তো কারও কারও ক্ষেত্রে পুরোপুরিভাবে আসবে না। কিছু লিমিটেশন থেকে যাবে।’

মেরুরজ্জুতে আঘাত, স্নায়বিক ও অস্থিহাড়-সংক্রান্ত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় বিলম্বে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা তৈরি হয়।

সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এ পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতার যতগুলো রোগী আমরা পেয়েছি তাদের মধ্যে শারীরিক সমস্যাটাই বেশি। পুনর্বাসনের একটা সময় থাকে। যে সময়ে তার ডেভেলপমেন্ট ভালো হবে। ওই সময়টা হারিয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে তার বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। তখন প্রগ্রেসটা স্লো হয়ে যায়।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ হারায় এক হাজার ৫৮১ জন। আহত হয় ৩১ হাজারের বেশি। পরিবারগুলোর দাবি, শহীদ পরিবারগুলোকে স্মরণ রাখাসহ আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসহ প্রয়োজনে পাঠাতে হবে বিদেশে।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর