হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটা শেষ পর্যন্ত হলো না। দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন শেষমেষ ছুঁতে পারলেন না কামালা। এত কাঠ-খড় পুড়িয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেও ভরাডুবি হলো ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিসের। মূল অঙ্গরাজ্য তো নয়ই, এমনকি ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটগুলোতেও শেষ মুহূর্তে চষে বেড়ানোর ফলাফলও শূন্য।
ফলাফল প্রকাশের পর যখন দেখা যায়, প্রায় আড়াইশ' ইলেকটোরাল ভোট পড়ে গেছে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঝুলিতে, তখনই হতাশ হয়ে তিনি ঘোষণা দেন, ওয়াশিংটনে পূর্ব নির্ধারিত র্যালিতে বক্তব্য রাখবেন না কামাল।
কিন্তু কেন এভাবে হেরে যেতে হলো কামালা হ্যারিসকে? পশ্চিমা বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ বলছে, গাজা ইস্যু, কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার ইস্যুকে খুব বেশি গুরুত্ব দেননি কামালা। মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে গাজায় গণহত্যা বন্ধের কথা বললেও পাশাপাশি এই কথাও তিনি বলে গেছেন, ইসরাইলকে সব ধরনের সহযোগিতাই যুক্তরাষ্ট্র করবে। যে কারণে ব্যাটল গ্রাউন্ডসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, এমন অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোট হারিয়ে ফেলেছেন কামালা। যেগুলো গিয়ে পড়েছে ট্রাম্পের ঝুলিতে।
নির্বাচনী প্রচারণার জন্যও খুব কম সময় পেয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণায় তার বক্তব্য নিয়ে মার্কিনদের মধ্যে ছিল হতাশা। নিজেকে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি দাবি করা কামালার কাছে সাধারণ মার্কিনদের প্রত্যাশা ছিল, দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরাবেন তিনি। কিন্তু কামালা হেঁটে গেছেন বাইডেনের দেখানো পথেই। বাইডেনের বলয় থেকে বেরিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে নিজেকে অন্যভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ায় নির্বাচনে এই ভরাডুবি বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে ডেমোক্র্যাটদের ওপর অর্থনীতি নিয়ে ভরসা করা যাবে কি না, সে বিষয়েও শেষ মুহূর্তে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছিলেন সাধারণ মার্কিনরা। কারণ বাইডেনের সময় মূল্যস্ফীতি, জাতীয় ঋণ, অর্থনীতির ভীতগুলোর অবস্থা খুব একটা ভলো না। অন্যদিকে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার সঙ্গে সঙ্গে দেশের শেয়ারবাজারে চাঙাভাব দেখা গেছে।
অন্যদিকে আগের মেয়াদে হিলারি, এই মেয়াদে কামালার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেশের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা তার জয়ের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন, মুসলিম ভোটারদের তার প্রতি আস্থা। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে রাশিয়া-ইউক্রেন, গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ হবে, এই প্রত্যাশা নিয়েও তাকে ভোট দিয়েছেন মানুষ।
এছাড়াও দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থায় বাইডেন প্রশাসনের ওপর হাঁপিয়ে উঠেছিল সাধারণ মার্কিনরা। ভোটের আগে অনেক মার্কিনই বলেছেন, তারা ট্রাম্পকে চান কারণ দেশের অর্থনীতি আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। যে কারণে কামালার ভরাডুবি হয়ে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।