উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
2

ঐতিহাসিক জয়ে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প

ঐতিহাসিক জয়ের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইলেকটোরাল কলেজের সবশেষ ফলাফল অনুযায়ী, ৫৩৮টির মধ্যে ২৭৯টিতে জয়ী হয়েছেন তিনি। জয়ের জন্য তার প্রয়োজন ছিল ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী কামালা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৪ ইলেকটোরাল ভোট।

গুরুত্বপূর্ণ সাতটি সুইংস্টেটের মধ্যে তিনটিতে জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। এসব অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা কাকে বেছে নেবেন, সেটি নিয়েই আগে থেকেই ছিল বিস্তর আলোচনা। সুইংস্টেটগুলোর মধ্যে শুরুতেই জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়ার ফলাফলে জয়লাভ করেন ট্রাম্প। অ্যারিজোনা, মিশিগান, নেভাদা ও উইসকনসিনের ফলাফল পেতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে। তবে এসব স্টেটে কামালার ভাগ্য খারাপ বলতেই হচ্ছে।

এদিকে পেনসিলভানিয়ায় জয় পাওয়ার পরপরই সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাষণে তিনি নিজেকে বিজয়ী দাবি করেছেন। একইসঙ্গে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করাই সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন সদ্যজয়ী এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এবারের নির্বাচনকে বলা হচ্ছে মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম বড় রাজনৈতিক লড়াই। বিশ্ববাসীর নজর ছিল এই নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট সাম্প্রতিক ঘটনায়। যেখানে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আর প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে নামেন বাইডেন প্রশাসনের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস। প্রথমবার হলেও স্বল্প সময়ে কামালা মার্কিনিদের নজর কাড়তে সক্ষম হন। যার ফলাফলও মিলেছে ইলেকটোরাল ভোটের টাইমলাইনে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে মার্কিন নাগরিকদের অনেকেরই প্রত্যাশা ছিলো যে, এবারের প্রেসিডেন্সিয়াল ভোটে কামালাই হবেন ‘ফার্স্ট চয়েস’। যার হাত ধরে সৃষ্টি হবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ইতিহাস। হোয়াইট হাউসের দরজা দিয়ে ডুকবেন দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।

তবে সেটি আর হলো না। দিনশেষে আবারও ট্রাম্পকেই বেছে নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। দেশটির ৪৭তম এবং নিজের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি।

ট্রাম্পের এই ফিরে আসার পথটা সহজ ছিলো না। ব্যাকফুটে থেকে রাজনৈতিক এই প্রত্যাবর্তনে নিজেকে শক্ত রাজনীতিক হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন ট্রাম্প। আর সেজন্যই বলা হচ্ছে এবারের নির্বাচন ঐতিহাসিক এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৮৭ সাল থেকে মার্কিন রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে ওঠেন। রিপাবলিকান পার্টি ছেড়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতেও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ার ইতিহাসে আছে ট্রাম্পের। রয়েছে যৌন নিপীড়ন ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ। এতো সমালোচনা ও বিতর্কের পরও রিপাবলিকান পার্টিতে নিজের শক্ত ভিত গাড়েন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প।

চারটি ফৌজদারি মামলায় ৯১টা গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি মামলা বিলম্বিত করাতে তার আইনি কৌশল অনেকাংশেই সফল হয়েছে। তিনটি মামলায় তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এছাড়া পর্ন তারকাকে ঘুষের মামলায় সাজা ঘোষণা ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে হেরে যাওয়ার পরও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পিছু হটানো সম্ভব হয়নি। যদিও ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার ঘটনায় সমর্থন দেয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে শঙ্কা ছিল। এমনকি দাতা এবং সমর্থকরাও তাকে আর কিছুতেই সমর্থন করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন। তবে হেভিওয়ট প্রার্থীর খরায় ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন থেকেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের ওপরই ভরসা রাখতে হয় রিপাবলিকানদের।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার জন্য ট্রাম্প প্রথম আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন ১৯৮৭ সালে। বিপুল পরিমাণ অর্থ ও ব্যবসায়িক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও যখন প্রার্থী হতে পারছিলেন না, তখন ১৯৯৯ সালে রিপাবলিকান দল ছেড়ে রিফর্ম পার্টিতে যোগ দেন। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০০৮ সালে বারাক ওবামাকে প্রার্থী করাতে রাগে ক্ষোভে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ছেড়ে আবারও ২০০৯ সাল থেকে রিপাবলিকান রাজনীতি শুরু করেন। তবে অধৈর্য্য ও অভিমানী ট্রাম্প ২০১১ সালে গিয়ে যোগ দেন ছোট রাজনৈতিক দল ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিয়নে।

একটা সময় ট্রাম্প বুঝে গিয়েছিলেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিয়নের মতো ছোট রাজনৈতিক দলে থেকে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না। তাই ২০১২ সালে আবারও রিপাবলিকান পার্টিতে ভেড়েন তিনি। বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়ায় এতবার দল পাল্টালেও তাকে না করতে পারেনি রিপাবলিকান পার্টি। এরপর দলটি থেকে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ আসে ২০১৫ সালে। প্রচারণার মাঠে ৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের মেইক অ্যামেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন শ্লোগানে ভর করেছিলেন। সেই সঙ্গে অভিবাসীবিরোধী নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৬ সালের নির্বাচনে হোয়াইট হাউজের মসনদও নিশ্চিত করেছিলেন ট্রাম্প।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনটি বিয়ে করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম স্ত্রী ছিলেন বিখ্যাত মডেল ইভানা জেলনিকোভা । ১৯৯০ সালে তাদের বিয়ে ভেঙে গেলে ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন অভিনয়শিল্পী মারলা ম্যাপলসকে। তাদের কন্যাসন্তানের নাম টিফানি। দ্বিতীয় বিয়েও ভেঙে যায় ১৯৯৯ সালে। এরপর ২০০৫ সালে বিয়ে করেন তার বর্তমান স্ত্রী, মডেল মেলানিয়া নাউসকে। ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প নামে তাদের একটি পুত্রসন্তান আছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন নিউইয়র্কের কুইন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে ট্রাম্প চতুর্থ। বড় ভাই ফ্রেড জুনিয়র অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর জীবনে মদ ও সিগারেট ছোঁননি বলে দাবি ট্রাম্পের।

এএইচ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর