৫২ লাখের শক্তিশালী জনগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা। শুধু তাই নয়, বিশ্বের শীর্ষ পরাক্রমশালী দেশটিতে মেক্সিকান আমেরিকানদের পর দ্বিতীয় শীর্ষ অভিবাসী সম্প্রদায়ও তারা। এদের মধ্যে ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটার প্রায় ২৬ লাখ।
ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ভারতীয় আমেরিকানদের পাল্লা ভারী। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস নিজেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। অথচ এবারই ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভারতীয় অভিবাসী ভোটারদের সমর্থন কমতে শুরু করেছে বলে তথ্য উঠে আসছে নির্বাচনপূর্ব শেষ মুহূর্তের জরিপে। বলা হচ্ছে, মায়ের ভারতীয় পরিচয়ের চেয়ে বাবার আফ্রিকান পরিচয়েই আগ্রহী বেশি বলে কামালার ভারতীয় পরিচয় খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয় ভারতীয় মার্কিন ভোটারদের অনেকের কাছে।
জয় পেলে কামালাই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট। তাই কামালার জয় চেয়ে ব্যাপক পূজা-অর্চনা চলছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতে। কিন্তু কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের জরিপের দাবি, ২০২০ সালে জয়ী বর্তমান প্রেসিডেন্টের চেয়ে নিজ জাতিগোষ্ঠীর প্রার্থীকেই কম পছন্দ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী ভারতীয়দের একটি বড় অংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিলান বৈষ্ণব বলেন, ‘২০১০ থেকে ২০২০ সালে আমাদের সম্প্রদায়ের আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অনেকদিক থেকেই এটা বেশ নতুন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারদের ৭০ শতাংশই ২০০০ সালের পর হয় এদেশে এসেছেন বা জন্মেছেন। আমরা মনে করি যে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় কমিউনিটি অনেক পুরোনো। কিন্তু আসলে তাদের একটি বড় অংশই তরুণ।’
জাতীয় জরিপে দুই প্রার্থী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস বলে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ সাত অঙ্গরাজ্যে কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধান নির্ধারণ করতে পারে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানের ভবিষ্যৎ। মার্কিন রাজনীতিতে অভিবাসীদের প্রভাব বাড়ছে বলে ভোটের আগে শেষ সময়ে আরব মুসলিম, ভারতীয়, হিস্প্যানিক, কৃষ্ণাঙ্গ- এমন নানান গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে ব্যস্ত দুই নেতাই। বিশেষ করে সাত সুইং স্টেটসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোটের পেনসিলভেনিয়ার পাশাপাশি জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা আর মিশিগানে সবচেয়ে বড় এশীয় আমেরিকানদের কমিউনিটি ভারতীয়দের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পররাষ্ট্রনীতি ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলেও অর্থনীতিসহ অভ্যন্তরীণ নানা ইস্যু তাদের মাথাব্যথার বড় কারণ। কারণ অগ্রগতির প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ঐক্য থাকা উচিত বলে মনে করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষক জো ম্যানিং বলেন, ‘মানুষ আসছে, বসতি গড়ছে, বিনিয়োগ করছে, কাজ করছে, কর দিচ্ছে। জনসংখ্যা বাড়লেও এটা সব সময় সবার জন্যই লাভজনক। যে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকে নিজের লাভেই আগে প্রাধান্য দেবেন সবাই।’
এদিকে, নির্বাচনের আগে ভারতীয় ভোটের শূন্যস্থান পূরণে কৌশলী হতে এক মুহূর্ত দেরি করেননি প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসী ইস্যুতে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় থাকলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত ভারতের অন্যতম প্রতিবেশী বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু ইস্যুতে ট্রাম্প বৃহস্পতিবারই বিশাল পোস্ট দিয়ে ফেলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের মিত্রতা আলোচনায় বহু আগে থেকেই।