মূলত অন্য যেকোনো খাতের তুলনায় সৌর প্যানেল, বায়ুচালিত টারবাইন, ব্যাটারি এবং বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) রেকর্ড উৎপাদন, ইনস্টলেশন এবং রপ্তানি কর্মসংস্থানের সুযোগ আরো বাড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থা (আইআরইএনএ) এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) গত মাসে জানিয়েছে, ২০২৩ সালে চীনের মূল ভূখণ্ডে প্রায় ৭৪ লাখ মানুষ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের কারণে কর্মসংস্থান পেয়েছে। যা বৈশ্বিক পর্যায়ে মোট কর্মসংস্থানের ৪৬ শতাংশ এবং ২০২২ সালের তুলনায় ৩২ শতাংশ বেশি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সৃষ্ট কর্মসংস্থান চীনের ভঙ্গুর আবাসন খাত এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের বিপরীতে আশার আলো হিসেবে কাজ করছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। গত সপ্তাহে প্রকাশিত জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে সেপ্টেম্বরে বেকারত্বের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
হেলকিনসিভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) গবেষক ও চীন দলের প্রধান শেন শিনই বলেন, ‘তালিকাভুক্ত শীর্ষস্থানীয় চীনা নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারের ওঠানামা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। বেশিরভাগ কর্মসংস্থান হয়েছে দক্ষ কর্মী ও গবেষণা কর্মীদের ক্ষেত্রে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এর মধ্যে তৈরি শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথে নেতৃত্ব দিচ্ছে সোলার প্যানেল।’
গত বছর চীনে ২১৭ গিগাওয়াট সৌর প্যানেল তৈরি করা হয়েছে, যা বিশ্বের মোট প্যানেলের অর্ধেকেরও বেশি। এর ফলে শুধু চীনের সৌর প্যানেল খাতে ৪৬ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এছাড়া চীন বায়ু বিদ্যুৎ শিল্পেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে। দেশটি বায়ু বিদ্যুৎ শিল্পে বিশ্বের ১৫ লাখ চাকরির মধ্যে ৫২ শতাংশ নিজেদের কর্মীদের সরবরাহ করছে। এর পরে অবস্থান করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যারা ২১ শতাংশ কর্মী সরবরাহ করতে সক্ষম হচ্ছে। অন্যান্য দেশ কর্মী তৈরি করার চেষ্টা করলেও, এক্ষেত্রে চীনের নিজের নেতৃত্ব ধরে রেখেছে।
তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অন্যান্য খাতের সঙ্গে বিপরীত অবস্থান রয়েছে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে চীনের আবাসন খাতে ৫ লাখের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ কমেছে। তবে নির্মাণ শিল্প এখনও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে, যা ২০২৩ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১৩ শতাংশ অবদান রেখেছিল।
এজন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত চীনের অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে বলে অভিমত অর্থনীতিবিদদের। ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতিতে যোগ করেছে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার, যা দেশটির মোট জিডিপির ৯ শতাংশ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত না থাকলে চীনের জিডিপি ৫ দশমিক ২ শতাংশের পরিবর্তে মাত্র ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেত বলেও জানিয়েছে বিশ্লেষকরা।
তবে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। চীনকে অবশ্যই শ্রমিকদের জীবাশ্ম জ্বালানির কাজ থেকে সরিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির কর্মের দিকে যেতে সহায়তা করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কর্মসংস্থানের জন্য কর্মীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় পাঁচ লাখ কয়লা খনি শ্রমিক তাদের চাকরি হারাতে পারে। চীন ও ভারত সম্ভবত এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভব করবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।