পুঁজিবাজার
অর্থনীতি
0

’পুঁজিবাজারে অতিদ্রুত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসান কমাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে’

পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাই অতিদ্রুত তাদের লোকসান কমাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ (বুধবার, ৩০ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। সেইসঙ্গে প্রণোদনা দেয়াসহ বেশ উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গত আওয়ামী সরকারের আমলে বড় ধস ও ক্ষতির সম্মুখীন হয় শেয়ারবাজার। বেশিরভাগ দুর্বল কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা ও সালমান এফ রহমানের মতো প্রভাবশালীদের সুবিধা দিতে গিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয় খায়রুল ও শিবলী কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা।

যে কারণে গত ১৫ বছরে ৭০টিরও বেশি কোম্পানি বাজারে আসলেও সেগুলোর বেশিরভাগই এখন বন্ধ। বছরের পর বছর লোকসানের কারণে শেয়ার লেনদেন হচ্ছে জেড ক্যাটাগরিতে। সেই সাথে খারাপ শেয়ারে মার্জিন ঋণের কারণে পুঞ্জীভূত লোকসান ছাড়িয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এমন ভঙ্গুর অবস্থায় যখন শেয়ারবাজার ধুঁকছে তখন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আশার আলো দেখতে পায় বিনিয়োগকারীরা। কারণ আওয়ামী সরকারের পতনের সাথে সাথে পুঁজিবাজার কারসাজির সাথে জড়িতরা আত্মগোপনে যান।

কিন্তু সংস্কার শুরু হলে ফের পতন দেখা যায় পুঁজিবাজারে। মাসখানেক ধরেই পুঁজিবাজারের সূচক ধারাবাহিকভাবে নিম্নমুখী। সর্বোচ্চ পতনের বিপরীতে সূচক বেড়েছে নামমাত্র। আর লেনদেনের পরিমাণও অনেক কম। এ কারণে সূচক নেমে আসে পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাজার নিয়ে ধারাবাহিকভাবে অংশীজনদের সাথে বৈঠক করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, বিনিয়োগকারী ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাথে এ পর্যন্ত ৩২টি সভা করেছেন নতুন দায়িত্ব নেয়া চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা। ফলে গত মঙ্গলবার থেকে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক বাড়ে ১১৮ পয়েন্ট।

তবে পুঁজিবাজারে বড় উত্থান দেখা যায় বুধবারে। এদিন লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি। মূলত বিএসইসিতে অর্থ উপদেষ্টা আসার খবরেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিন বেলা তিনটা থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সাথে বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা। বৈঠকে পুঁজিবাজার সংস্কারে প্রধান আটটি বিষয় উল্লেখ করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিএসইসি।

এর আগে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্সের সাথে বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা। আলোচনা হয় টাস্কফোর্সের কার্যক্রম নিয়ে।

পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য আল আমিন বলেন, 'আমরা এখন পর্যন্ত যত ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত স্কিম আগে পরে আলোচনা হয়েছে এটা সাধারণত দেখা গেছে যে বড় যারা আছে তাদের দিক থেকেই অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া হয়েছে। এবার একেবারে ক্ষুদ্র লেভেলে ডরা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের ব্যাপারে আমরা একটা ফ্রেমিংয়ের মধ্যে রেখে, যেন তারা সেটা পায় এ ধরনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ রাখবো।'

পরে অর্থ উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে বিএসইসি'র চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ জানান, পরিকল্পনামাফিক কাজ এগিয়ে নিতে নির্দেশ পেয়েছেন, যেন সংস্কার প্রক্রিয়া গতি পায়।

রাশেদ মাকসুদ বলেন, 'সব বিষয়েও উনার সাথে আলাপ হয়েছে। উনি শুধু আমাদের সাথে না, আমাদের তদন্ত কমিটির সাথে, যে টাস্কফোর্স আছে, সবার সাথে আলাপ করেছেন।'

ধারাবাহিক পতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে আশ্বাস দেন অর্থ উপদেষ্টা। এমনকি প্রণোদনা দেয়ার কথাও জানান তিনি।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'শেয়ার মার্কেটের বর্তমান কিছু সমস্যা আমরা সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমাদের মূল লক্ষ্যটা হলো আগে যতরকম সমস্যাগুলো আছে সেগুলো রিমুভ করে যেন আন্তর্জাতিকভাবে একটা ভালো শেয়ার মার্কেট থাকে।'

এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের পুঁজিবাজার তৈরিতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'ছোটদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজর সার্ভিস, কোথায় কোথায় ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে জানে না। সব তো অন্যরা এসে করে। সব বিষয়েই কথা হয়েছে। ইমিডিয়েটলি দু'একটা দেখবে যেটা এখন আমাদের লিমিটের সাথে সম্ভব সেটা আমরা করবো।'

বিগত সময়ে পুঁজিবাজারে উন্নয়নে কোনো কাজ হয়নি। যে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেই সাথে তারল্য সংকট, মার্জিন ঋণ ও মিউচুয়াল ফান্ডের সমস্যা নিরসনে কাজ করা হবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।

এসএস