দেশে এখন
স্বাস্থ্য
0

চাঁদপুরে ৯০ ভাগ নলকূপে আর্সেনিক শনাক্ত

দেশের অন্যতম আর্সেনিকপ্রবণ জেলা চাঁদপুর। এক সময় স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিভিন্ন এনজিও বিনামূল্যে রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ ওষুধ প্রদান করলেও বর্তমানে তা বন্ধ হয়েছে। জেলার গভীর নলকূপগুলোতে উপস্থিতি না থাকলেও প্রায় ৯০ ভাগ অগভীর নলকূপে শনাক্ত হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গভীর নলকূপ সরবরাহের পাশাপাশি পরিশোধিত নদীর পানির ব্যবহার বাড়ানো গেলে কমে আসবে ঝুঁকি। চিকিৎসকরা বলছেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কাজ করা হবে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে।

শাহরাস্তি উপজেলার আয়নাতলী গ্রামের বাসিন্দা মীর হেলাল উদ্দিন। আর্সেনিক আক্রান্ত হন ২০০৫ সালে। আরও বছর তিনেক পর জানতে পারেন তার দুটি কিডনিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এর প্রভাবে। হাত-পাসহ শরীরজুড়ে আর্সেনিকের দাগ। অসচেতনতার দায় নিতে হচ্ছে এমন ভয়াবহতায়।

হেলাল উদ্দিন জানান, 'আর্সেনিক আছে এটার চিকিৎসা ৩ বছর ধরে করছি। এরপরে পায়ের সমস্যা দেখা গেছে। পরে ঢাকাতে যেয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে দেখা গেল আর্সেনিক থেকে কিডনিতে প্রভাব পড়ছে।'

হেলালের মত আরও অনেক ভুক্তভোগী আছেন শাহরাস্তি উপজেলায়। ২০১২ সালের পর থেকে সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্সেনিক পরীক্ষায় অনীহা বেড়েছে অনেকের। এখনো অনেকেই পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই পান করছেন আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি। তবে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো গেলে আর্সেনিক আক্রান্ত কমে আসবে বলে জানান এই চিকিৎসক।

শাহরাস্তি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হোসেন বলেন, 'আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করছে। উপজেলা ডাক্তারদের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়তই আর্সেনিকের ব্যাপারে জনসচতেনতা তৈরি করা হচ্ছে।'

আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী মীর হেলাল উদ্দিন। ছবি: এখন টিভি

দীর্ঘ সময় আর্সেনিকযুক্ত পানি পানে চর্মরোগ, টিউমার, কিডনি, লিভারের রোগসহ ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তবে জেলায় আর্সেনিক আক্রান্ত রোগীর হিসাব নেই স্বাস্থ্য বিভাগে। জনসাধারণকে আর্সেনিকমুক্ত রাখতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে উদ্যোগের কথা জানান জেলা সিভিল সার্জন।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন নূর আলম দীন বলেন, 'যারা স্বাস্থ্যকর্মী আছে তাদেরকে আবার আর্সেনিক কীভাবে মুক্ত হওয়া যায় তার জন্য ট্রেনিং দেওয়া হবে। আর রোগীদের খুঁজে বের করবো এবং আর্সেনিকযুক্ত পানি যাতে না পান করে তার জন্য জনসচেতনতা বাড়াবো।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি লিটার পানিতে .০১ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিক থাকলে তা খাবারের জন্য নিরাপদ। তবে বাংলাদেশ সরকারের মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি লিটারে .০৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিক নিরাপদ হিসাব করা হয়।

চাঁদপুরের ২ লাখ ৫ হাজার ৭০টি নলকূপের ৬০ শতাংশ অগভীর ও ৪০ শতাংশ গভীর। নলকূপে আর্সেনিক পাওয়া না গেলেও অগভীর নলকূপের প্রায় ৯০ শতাংশে .০৫ এর বেশি আর্সেনিক পাওয়া যায়। তাই গভীর নলকূপের পাশাপাশি পরিশোধিত নদীর পানি সরবরাহ বাড়ানো গেলে এই অঞ্চল নিরাপদ থাকবে বলে মনে করেন চাঁদপুরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মুসা মোহাম্মদ ফয়সাল। বলেন, 'আমরা সরকারিভাবে গভীর নলকূপ করছি। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছি যাতে তারা গভীর নলকূপ স্থাপন করে।'

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকে। যার ভয়াবহতায় আর্সেনিকমুক্ত পানি পানের লক্ষ্যে শুরু করা হয় নলকূপের পরীক্ষা।

২০১১-১২ অর্থবছর থেকে শুরু হয় সরকারিভাবে গভীর নলকূপ বসানোর কাজ। বিভিন্ন পৌরসভায় সরবরাহ হয় পরিশোধিত নদীর পানি। চাঁদপুর জেলায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় এক হাজার টিউবয়েল হয়ে পড়েছে ব্যবহার অনুপযোগী।