নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর প্রথম দুই মাসে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিসের প্রতি জনসমর্থন ক্রমশ বাড়তে দেখা দেখা গেলেও সেপ্টেম্বর থেকে সংখ্যাটি তুলনামূলক স্থিতিশীল। সবশেষ জাতীয় জরিপেও নেই হেরফের। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম ও একমাত্র বিতর্কে যুক্তিতর্কে কামালা এগিয়ে থাকলেও জনপ্রিয়তার জরিপে তা খুব একটা দৃশ্যমান নয়।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির কারণে প্রার্থীর জনপ্রিয়তার জরিপ নির্বাচনের ফল নির্ধারণের চূড়ান্ত মাপকাঠি নয়। জনতার ভোটের পর প্রেসিডেন্ট হতে হলে অর্ধশত অঙ্গরাজ্যের মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল আসনের অন্তত ২৭০টি পেতে হবে প্রার্থীকে। বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে সবসময় নির্দিষ্ট দলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত থাকে বলে পছন্দের দল পরিবর্তনশীল এমন অঙ্গরাজ্যগুলোর ওপর চূড়ান্ত ফল নির্ভর করছে অনেকটা।
ব্যাটলগ্রাউন্ড বা সুইং স্টেটস হিসেবে পরিচিত এসব অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা এবারের নির্বাচনে সাতটি। যেখানেও এগিয়ে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের নীল শিবির।
ভোটারদের মধ্যে একজন জানান, সঠিক মানুষটিকে ভোট দেয়ার বিকল্প নেই। জীবনে পেছাতে চাই না আমি। কামালাকে বাদ দিয়ে অন্য যে কাউকে ভোট দিলে এর মানে হবে পিছিয়ে যাওয়া। এর ফল ভালো হবে না।
এদিকে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও জরিপে সমর্থন কিছুটা পড়তির দিকে কামালার। কারণ হিসেবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন ভোটারদের আস্থা হারানো। ডেমোক্র্যাটদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখলেও ভোট দেবেন বুঝেশুনেই, বলছেন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা।
কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে একজন জানান, আফ্রিকান আমেরিকান পুরুষদেরও অন্য যেকোনো লোকের মতো নিজ পরিবারের জন্য, সন্তানের জন্য সম্পদ গড়ার, অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্যদ্রব্যের দাম ইত্যাদি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার, ভোট দেয়ার প্রয়োজন আছে। এসব প্রয়োজন উপেক্ষা করে ভোটের জন্য তাদের সামনে স্রেফ একটা মূলা ঝুলিয়ে দিলে হবে না।
আরও একজন জানান, কামালার কৃষ্ণাঙ্গ ভোট কমার খবর বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছড়ানো হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। তার আত্মবিশ্বাস কমাতে এসব কথা বলছে একদল মানুষ। আর ট্রাম্পের প্রতি কৃষ্ণাঙ্গদের আগ্রহও বাজে কথা। একদম অর্থহীন।
স্পষ্টই কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে কামালা এগিয়ে থাকলেও শতভাগ সমর্থন নিশ্চিতে প্রচারে কমতি রাখছে না ডেমোক্র্যাট শিবির । বিশেষ করে সুইং স্টেটসগুলোতে ভোটারদের বড় অংশ কৃষ্ণাঙ্গ বলে তাদের সমর্থন হেলাফেলার সুযোগ নেই ডেমোক্রেটিক পার্টির, বিশেষ করে যেখানে প্রার্থী নিজেই কৃষ্ণাঙ্গ বংশোদ্ভূত । এ অবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জন্য সোমবার নতুন একগুচ্ছ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন কামালা ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষ্ণাঙ্গদের সমর্থন অর্জন করে নিতে হবে ৫৯ বছর বয়সী এ প্রার্থীকে।
ইউনিভার্সিটি অব অরিগনের সহযোগী অধ্যাপক চ্যান্ডলার জেমস বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ভোটাররা যে দিন দিন বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে উঠছে এবং নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে রাজনীতিকে বেছে নিচ্ছে, এ বিষয়টা দুই প্রার্থীকেই স্বীকার করতে হবে। কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষরা বাইডেন-ওবামাসহ বরাবর ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন দিলেও অতীতে এ হার ছিল অনেক বেশি। তারা যে কোনো জড়বস্তু নয়, সে স্বীকৃতি দেয়া জরুরি। নীতি, বক্তব্য আর কাজ দিয়ে তাদের সমর্থন আদায় করে নিতে হবে।'
এদিকে নির্বাচনের গুণে গুণে আর ২১ দিন বাকি থাকতে সোমবার দুই প্রার্থীই জনসভা করেন অন্যতম সুইং স্টেট পেনসিলভেনিয়ায়। নানা ইস্যুতে দু'জনই দু'জনকে দোষারোপ করেন নানা ইস্যুতে।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে যে কতো মানুষ মরছে, কেউ জানে না। সঠিক সংখ্যাটা অনেক অনেক বগড়। বাইডেন এ নিয়ে কিছুই করছেন না। এক বছরের বেশি সময় ধরে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। এটা এমন এক যুদ্ধ, যেটা বন্ধ করতেই হবে এবং আমরা এই যুদ্ধ বন্ধ করবো।'
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস বলেন, 'পেনসিলভেনিয়ার ভেতরে শত্রু লুকিয়ে আছে বলে দাবি তার। আমাদের দেশের ভেতরে শত্রু আছে বলছেন তিনি। তাকে যেই সমর্থন দেবে না কিংবা তার ইচ্ছার সামনে নত হবে না, তাকেই তিনি শত্রু মনে করেন, দেশের শত্রু মনে করেন।'
নির্বাচন নিয়ে উত্তাপ বাড়তে থাকার মধ্যেই ট্রাম্প-কামালার বাগযুদ্ধও হচ্ছে তীব্রতর। দেশের ভেতরেই শত্রু লুকিয়ে আছে দাবি করে তাদের সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নির্মূলের কথা সম্প্রতি বলেন ট্রাম্প। জবাবে তাকে গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেন কামালা।