অর্থনীতি
0

বড় ঋণ নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ নেই: চীনা রাষ্ট্রদূত

অ-শুল্ক বাধা বাংলাদেশ চীন বাণিজ্য ঘাটতির প্রধান কারণ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

অ-শুল্ক বাধা বাংলাদেশ চীন বাণিজ্য ঘাটতির প্রধান কারণ। রপ্তানি সহজ করা ও পণ্যের বহুমুখীকরণই পারে এই ঘাটতি কমাতে। বাংলাদেশ চীন সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে একথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এসময়, চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনৈতিক রূপান্তরের এই সময়ে বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন, দুশ্চিন্তা নেই বড় ঋণ নিয়ে।

সম্পর্কের ৫০ বছরে বাংলাদেশ চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছাড়িয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। যার প্রায় ৯০০ কোটি টাকার পণ্য চীন থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ থেকে যায় মাত্র ১০০ কোটি টাকার পণ্য। শুধু বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বই নয় বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগীও চীন।

ভারতকে তিস্তা প্রকল্প দেয়া নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল ঢাকা-বেইজিংয়ের। সবশেষ চীন সফরেও প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে সময় সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে।

তাই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছিল কূটনৈতিক পাড়ায়। এমন প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের সেমিনারের যৌথ এই আয়োজন। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের বক্তব্যে উঠে আসে দু'দেশের সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, 'সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে কমাতে হবে বাণিজ্য ঘাটতি। উন্নয়নের জন্য চীনের ঋণ যেমন দরকার তেমনি নজর রাখতে হবে অর্থের অপচয় যেন না হয়।'

এরপরে কথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। আশ্বাস দেন রাজনৈতিক রূপান্তরের এই সময়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার। জানান, বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা দারিদ্র্য দূর করার সুযোগ এনে দিয়েছে। আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ এ সরকার নিয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ চায়না পরস্পরকে সহযোগিতা করেই সামনে এগোবে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, 'আমরা আরও নতুন নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে চাই। করোনা মহামারির সময় শুধু চাইনিজ প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে কাজ করে গেছে। যা আমাদের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। চীনের বড় ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। দ্বিপক্ষীয় অবস্থানের পরিবর্তন আনতে হবে।'

তিনি বলেন, 'গ্লোবাল সাউথে বাংলাদেশ-চায়নাকে পরস্পরের সহযোগিতা করেই এগোতে হবে। বন্ধুত্বের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন আসবে না। এই সরকারের সাথে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করে যেতে চাই। বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। খুব দ্রুত দেশটি সমৃদ্ধির দেখা পাবে, এটা প্রত্যাশা করে চীন।'

চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে মুখিয়ে আছে উল্লেখ করে ইয়াও ওয়েন বলেন, সৌরশক্তি, কৃষি, অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নসহ আরও নতুন নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র নিয়ে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে আগ্রহী চীন।

এসময় বাংলাদেশ থেকে চীনের কাছে মানবসম্পদ উন্নয়ন, সামরিক, জ্বালানি ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে সহায়তা চাওয়া হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, অ-শুল্ক বাধা বাংলাদেশ চীন বাণিজ্য ঘাটতির প্রধান কারণ। রপ্তানি সহজ করা ও পণ্যের বহুমুখীকরণই পারে এই ঘাটতি কমাতে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, 'নন ট্যারিফ বেরিয়াস আমাদের বাণিজ্য ঘাটতির প্রধান কারণ। আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরণ নেই। বাণিজ্য ঝুড়ি বৈচিত্র্যময় নয়। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছি না। চীনের সামরিক সহযোগিতা বাংলাদেশের আরও বেশি প্রয়োজন হবে। মানুষকে মানবসম্পদে পরিণত করতে চীনের সহযোগিতা খুবই জরুরি।'

এসময় তৌহিদ হোসেন মিয়ানমারের উপর চীনের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজে চীনের সক্রিয় সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান করেন।

তিনি বলেন, 'চীনের মিয়ানমারের ওপর প্রভাব রয়েছে। তারা নিরাপত্তার প্রয়োজনে চেষ্টা করলে এই মানুষগুলোকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সহজ হবে।'

বাংলাদেশ যে একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাতে স্থিতিশীলতা রাখতে বাজার ব্যবস্থাসহ দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রেখে এগিয়ে নিতে দু'দেশের একসাথে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন বক্তারা।

এসএস