দুঃশাসন, ফ্যাসিবাদ, বিদেশি আগ্রাসন। ৫৩ বছর বয়সী বাংলাদেশ এতদিন সয়ে গেছে সবই। আর কত?
বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দল, মত নির্বিশেষে সকলের চাওয়া রাষ্ট্র সংস্থার। সে অনুযায়ী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দেয়া হয় নানা প্রস্তাবনা। অন্তর্বর্তী সরকারও সংস্কার কমিশন গঠন করে।
তবে কি শুধুই রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার করলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে? নাকি সে সাথে দরকার রাজনৈতিক দলগুলোরও সংস্কার? জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলো গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নিজেদের কতটা সংস্কার করেছে? এখন টেলিভিশনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের কাছে।
তিনি বলেন, 'দলের সংস্কার বলতে এটা চলমান প্রক্রিয়া। জাতীয় সম্মেলনের মধ্যে দলের গঠনতন্ত্র, সাংগঠনিক কাঠামো বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী নেতা-কর্মীদের বিবেচনা করতে হয়। সেই হিসেবে আগামী জাতীয় সম্মেলনে আমাদের কিছু কিছু সংশোধনী, সংস্কার আসবে। এর মধ্যে আরও কিছু যদি সংস্কার করতে হয় যা জনগণের মধ্য থেকে আসে তাহলে সেটা আমরা গ্রহণ করবো।'
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ বলেন, গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'এই যে বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সাম্যের ভিত্তিতে আইনের শাসনের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে তখন মানুষের সর্বঅধিকার বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ ভোগ করতে পারবে। সেটাই বৈষম্যহীন এবং সাম্যের বাংলাদেশ হবে। এই হচ্ছে গণবিপ্লবের অঙ্গীকার, অভিপ্রায়, ইচ্ছা। এটাকে বাস্তবায়ন করার জন্যই আমাদের রাজনীতি করে যেতে হবে।'
এদিকে জামায়াতে ইসলামি নিজেদের সংস্কার নিয়ে কী ভাবছে? গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দলটির সংযোজন বিয়োজন হয়েছে কতটা?
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, 'যেকোনো স্টেপ যদি আমরা সম্পন্ন করি, সেটা নিয়ে আমরা রিভিউ করি। সেখানে ভুল-ত্রুটি কী হয়েছে সেটা নিয়ে পর্যালোচনা করি। সেই ভুলগুলোকে আমরা সংশোধনের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করে নিই, সেটা যে লেভেল থেকেই আসুক। ভুল-ত্রুটি সংশোধনের এ সংস্কার পদ্ধতিও কিন্তু আমাদের দলের একটা বড় বৈশিষ্ট্য।'
সমাজে ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জামায়াত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন হামিদুর রহমান আযাদ।
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের যে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা নেই। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, নিরাপত্তা নেই, মানবিক মর্যাদা নেই। এই কথাগুলো আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাবেও আছে, ইস্তেহারেও আসবে। রুল অফ ল এর চেয়েও শক্তিশালী কথা হচ্ছে রুল অফ জাস্টিস। ন্যায় বিচারের যে শাসন। এর মধ্যেই কিন্তু রুল অফ ল একটা পার্ট।'
তুলনামূলক ছোট দলগুলো নিজেদের সংস্কার হিসেবে তরুণ ও নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, 'অভ্যুত্থানের পর আমাদের পরিবর্তন হচ্ছে তরুণদের গুরুত্ব দেয়া, নারীদের আরও বেশি দলে অন্তর্ভুক্তি করা। এখন থেকে উৎসাহিত করছি যে ছাত্র, ছাত্রী, নারী ও তরুণদের আমাদের দলে কীভাবে নিয়ে আসা যায়। বেশি বেশি তাদের কমিটিতে ঢুকিয়ে তাদের হাতে নেতৃত্বটা কীভাবে দেয়া যায়।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, 'তারুণ্যের এই নতুন চিন্তাভাবনাকে এগিয়ে নিতে অনেক মানুষ, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ যুক্ত হচ্ছে তাদের মতামত দিচ্ছে এবং গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে যারাই সম্পৃক্ত থাকবে তাদের সকলের চিন্তা এবং মতামতের আলোকেই আগামীতে গণঅধিকার পরিষদের কর্মপন্থা নির্ধারিত হবে।'
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলো পুরোনো ভাবনা পরিহার না করলে, রাষ্ট্র সংস্কার ভেস্তে যাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, 'আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো আগের যে সনাতন ধারা, গতানুগতিক ধারায় পরিচালিত হচ্ছিল, সেটি সেভাবে এখন আর হবে না। নতুন চিন্তায়, নতুন ধারায়, নতুন বাংলাদেশের চিন্তা করতে হবে। মুখে গণতন্ত্র বলায় যথেষ্ট নয়, বুকে গণতন্ত্র থাকতে হবে। আর বুকে গণতন্ত্র হলে তাকে তার কর্ম, আচার-আচরণ, ব্যবহারে প্রতিফলিত হবে।'
পেশিশক্তির প্রদর্শন নয় বরং মানুষের অধিকার রক্ষায় গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে সব দলকে কাজ করার আহ্বান বিশ্লেষকদের।