কৃষি , শস্য
দেশে এখন
0

হয়রানির কারণে সরকারি গুদামে ধান দিতে আগ্রহ নেই কৃষকের

সুনামগঞ্জে এবারও কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বছর জেলায় ১৩ লাখ টনের বেশি ধান উৎপাদন হলেও সরকার মাত্র ২৯ হাজার টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এরপরও সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে হাওরের কৃষকরা বিপুল পরিমাণ ধান উৎপাদন করলেও হয়রানির কারণে সরকারি গুদামে ধান সরবরাহে আগ্রহ নেই কৃষকের। অনেকটা বাধ্য হয়েই কমদামে ফড়িয়া-পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা।

হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। এখানকার কৃষকদের প্রতিবছর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে সোনালি ধান ঘরে তুলতে হয়।

হাওরের জেলাটিতে প্রতিবছর ধান উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লেও গেলো সরকারের সময় কৃষকদের কাছ থেকে নামমাত্র ধান সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু সরকারি গুদামে সে ধান সরবরাহেও হাওরের কৃষকদের পড়তে হয় নানা হয়রানি ও সিন্ডিকেটের কবলে। যার ফলে খাদ্য গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা।

তেমনি একজন কৃষক সদর উপজেলার নূর মোহাম্মদ। সরকারি গুদামে ধান সরবরাহে তার রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। যার কারণে এখন আর খাদ্য গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন তিনি।

কৃষক নূর মোহাম্মদ বলেন, 'ওখান থেকে টাকা আনতে গেলে ঘুষ দিয়ে টাকা আনতে হয়। যেখানেই যাই সেখানেই ঘুষ চায়। এ কারণে আমরা গুদামে ধান দেই না।'

কৃষক নূর মোহাম্মদ জমিতে ধানের চারা রোপন করছেন। ছবি: এখন টিভি

চলতি বছর জেলার প্রায় ১০ লাখ কৃষক ১৩৭টি হাওরে দুই লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করেছিলেন। যেখান থেকে প্রায় ১৩ লাখ টনের বেশি ধান উৎপাদন হলেও সরকার নামমাত্র ২৯ হাজার টন ধান কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। কিন্তু সে লক্ষ্যও পূরণ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মে থেকে ৩১ আগস্ট তিন মাসে সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, দিরাই, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুরসহ ১২ উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে মাত্র ১৮ হাজার ৮৪১ টন ধান। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ।

একজন কৃষক বলেন, 'এরা নিজেদের মধ্যে থেকেই ধান নেয়। অন্য মানুষরা তো কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি। আমাদের কাছ থেকে সস্তায় ধান কিনে সরকারের কাছে অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। আমরা আসলে উপযুক্ত মূল্যটা পাই না।'

সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহে কৃষকের হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা। জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে দাম বাড়িয়েও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি।

সুনামগঞ্জের খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম ভূঞা বলেন, 'ধান কেনার সময় জেলা প্রশাসক থাকেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকেন এবং কৃষকরা এখানে ধান নিয়ে আসেন। আমাদের একটা বিনির্দেশ আছে, সেই নির্দেশের মধ্যেই আমরা ধান নেই। কৃষকদের এ ধরনের হয়রানি করার কোনো কিছু নেই। আমার কর্তৃপক্ষ যারা আছেন তাদের কোনো সুযোগ নেই। আমরা এটা নিবিড় মনিটরিংয়ে রাখি, সেজন্য আমার জানামতো কোথাও এ ধরনের অভিযোগ শুনি নাই।'

২০২৩ সালে এ জেলার কৃষকদের কাছ থেকে ১৭ হাজার টন ধান কেনার কথা থাকলেও সংগ্রহ করা হয় সাড়ে ১৫ হাজার টন।

এসএস