ইরানের রাজধানী তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদের সামনে জড়ো হয়েছেন লাখ লাখ বাসিন্দা। হাত নেড়ে সকলকে অভিবাদন জানালেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ'র মৃত্যু, লেবাননে ইসরাইলি অভিযানের শুরু এবং ঐ একই দিনে ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এই প্রথম জনসমক্ষে ভাষণ দেন খামেনি। দাবি করেন, ইসরাইলে হামলা করে ইরান কোনো অপরাধ করেনি। সম্পূর্ণ ন্যায়সংগত হামলার মাধ্যমে নেতানিয়াহুকে বার্তা দেয়াই ছিল তেহরানের উদ্দেশ্য।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা ইরানের শত্রু, তারা গাজারও শত্রু। লেবানন, ইরাক, মিশর, সিরিয়া, ইয়েমন- আমাদের সবার শত্রু একজনই। তারা দেশভেদে শুধু হামলার পদ্ধতি বদলায়।’
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) জুম্মাহ'র নামাজের পর বিশ্ববাসীর উদ্দেশে খামেনি বলেন, ইসরাইল ইস্যুতে কোনো ধরনের আরোপিত ধারণার ওপর ভরসা করে ইরান সংঘাতে জড়াবে না। ইরান জোর করে কিংবা তাড়াহুড়া করে প্রতিশোধ নিতে যায় না। তবে, তেল আবিব যদি সংযত না হয়, তাহলে তেহরানও চুপ করে বসে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খামেনি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার এক ভয়ংকর রাতের সাক্ষী হলো লেবাননবাসী। মধ্যরাতে বৈরুতে বেসামরিক যাত্রীবাহী বিমান অবতরণের কিছুক্ষণ বাদেই ইসরাইলি হামলায় কেঁপে উঠে পুরো রাজধানী। বৃহস্পতিবার দেশটিতে ২০টি হামলা চালায় ইসরাইল, যার ১১টিই ছিল বৈরুতে। হামলা হয়েছে বৈরুত বিমান বন্দরের কাছে। বোমা হামলার পর বন্ধ আছে লেবানন থেকে সিরিয়া যাওয়ার মূল সড়ক।
ইসরাইলের গণমাধ্যমগুলোর দাবি, হামলার টার্গেট ছিল হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাশেম সাফি উদ্দীন। হাসান নাসরাল্লাহ নিহতের পর সাফি উদ্দীন হিজবুল্লাহর হাল ধরবেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। যদিও সাফি উদ্দীন নিহত হয়েছেন কিনা, এ বিষয়ে নিশ্চিত করেনি কোনো পক্ষই।
এদিকে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে হিজবুল্লাহও। বৃহস্পতিবার ২৩০টিরও বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে গোষ্ঠীটি। সঙ্গে ইরাক থেকে ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স বাহিনী ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে। যদিও হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, ইসরাইলে হামলার পর পালটা হামলার শঙ্কায় রয়েছে ইরান। দেশটির জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না চালাতে সতর্ক করলেও একদিন পরই নিজের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন জো বাইডেন। এখন এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যদিও ইসরাইলের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা পাঠানো হবে না বলেও জানায় বাইডেন প্রশাসন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং বলেন, ‘আমরা বড় আঞ্চলিক সংঘাত চাই না। আমরা কোনো গোষ্ঠী, সংগঠন বা দেশের বিরুদ্ধেও যুদ্ধে জড়াতে চাইনা। ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়তই যোগাযোগ রাখছি। তারা কীভাবে পাল্টা হামলা চালাতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা করছি। হামলার ধরণ কীরূপ হবে, এ নিয়ে জল্পনা তৈরি করতে দিতে চাই না। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবো।’
চলমান পরিস্থিতিতে যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের পট পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে সংঘাত কোনদিকে মোড় নেয় সেদিকেই নজর বিশ্ববাসীর।