তথ্য-প্রযুক্তি , মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

লেবাননে ডিভাইস বিস্ফোরণ, পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা

লেবাননে হিজবুল্লাহ’র ব্যবহৃত পেজার ও ওয়াকি-টকিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বিস্ফোরণের পর বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাড়ছে উদ্বেগ। প্রযুক্তি পণ্যকে প্রাণঘাতি অস্ত্রে রূপ দেয়ার নজিরবিহীন এ দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতে হুমকি হিসেবে দেখছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে, অ্যাপল, স্যামসাং এর মতো টেক জায়ান্টগুলোর ওপরও এর প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা তাদের।

নিরাপদ যোগাযোগ রক্ষায় হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহৃত পেজার বিস্ফোরণের একদিন না যেতেই বুধবার ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লেবানন। দু'দিনের বিস্ফোরণে ঘটে বহু হতাহতের ঘটনা।

নজিরবিহীন এসব হামলার জন্য প্রথম থেকেই ইসরাইলকে দুষছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এ অবস্থায় ইসরাইল-হিজবুল্লাহ উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। এই যখন অবস্থা, তখন আর কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে প্রাণঘাতি বিস্ফোরণ হয় কি-না সেই আতঙ্কে দিন পার করছে লেবাননবাসী।

প্রযুক্তি পণ্যকে অকল্পনীয়ভাবে মারণাস্ত্রে রূপ দেয়ার এই দৃষ্টান্ত গোটা বিশ্বকে ফেলছে দুশ্চিন্তায়। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তাইওয়ানের পেজার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গোল্ড অ্যাপোলো ও হাঙ্গেরির বি.এ.সি। ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণের পর অভিযোগের আঙুল উঠেছে জাপানের ওয়াকি-টকি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আইকমের দিকেও। তবে বিস্ফোরিত পণ্যগুলো নিজেদের বলতে রাজি না কোনো প্রতিষ্ঠানই। ১০ বছর আগেই বিস্ফোরিত মডেলের রেডিও উৎপাদন বন্ধ করার দাবি আইকমের।

জাপানি প্রতিষ্ঠান আইকমের পরিচালক ইয়োশিকি এনোমোটো বলেন, ‘এই মডেলটি এমন একটি সময় আমরা উৎপাদন করেছি যখন আমরা হলোগ্রাম স্টিকার যোগ করিনি। যদি এই ডিভাইসটি সেই সময়ের হয় তাহলে এতে হলোগ্রাম স্টিকার থাকার কথা না। কিন্তু বিস্ফোরিত ডিভাইসে হলোগ্রাম আছে।’

লেবাননে তাহলে কীভাবে এলো বিস্ফোরক ভর্তি ডিভাইসগুলো। তবে কী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য নকল করে অস্ত্রে রূপ দিচ্ছে ইসরাইল? এমনটা করা হলেও এতো নিখুঁতভাবে সরবরাহই বা করা হচ্ছে কীভাবে?

এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। তবে এসব কাজে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অভিজ্ঞতার ইতিহাস বহু পুরোনো। ১৯৯৬ সালে একই কায়দায় হামাসের বোমা প্রস্তুতকারক ইয়াহিয়া আয়াশকেও হত্যা করেছিলো ইসরাইল।

লেবাননে বিস্ফোরক ভর্তি এসব প্রযুক্তি পণ্য সরবরাহ বাস্তবায়নে ঠিক কোথায় আপোস করা হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে জাপানের ওয়াকি-টকি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আইকমের দাবি, তাদের পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে কোনো প্রক্রিয়ায় বিস্ফোরক ঢুকানো অসম্ভব।

ইয়োশিকি এনোমোটো বলেন, ‘উৎপাদন প্রক্রিয়া চলাকালীন ডিভাইসে কোন ধরনের বিস্ফোরক রাখা অসম্ভব। কারণ আমরা রোবোটিক্স নির্ভর উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কাজ করি। যেখানে খুব দ্রুত কাজ হয়, ডিভাইসে বিস্ফোরক সেট করা মতো সময় নেই। তা সম্ভবও না।’

এ অবস্থায় সরবরাহ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

কারণ ভবিষ্যতে দৈনন্দিন যোগাযোগের সরঞ্জামগুলোকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে বলেও আশঙ্কা তাদের। এতে প্রযুক্তির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাত, এমনটাই শঙ্কা প্রযুক্তি শিল্প এবং সরবরাহ চেইন বিশেষজ্ঞদের।

এমন পরিস্থিতিতে অ্যাপল, স্যামসাং, হুয়াওয়ে, শাওমি এবং এলজির মতো স্মার্টফোন জায়ান্টগুলো প্রভাবিত হয় কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া অন্যান্য ছোট প্রতিষ্ঠানের তুলনায় নিরাপদ। লেবাননে ডিভাইস বিস্ফোরণের পর এসব প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর