দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটি গড়ে উঠেছে বাগেরহাট জেলার খুলনা-মোংলা মহাসড়কের সুখদাড়ায়। ৮০ একর জায়গার ওপর ১৯৮৪-৮৫ সালে ১১১টি বিভিন্ন জাতের মহিষ নিয়ে শুরু হয় যাত্রা। তবে বর্তমানে খামারের জায়গার পরিমাণ রয়েছে প্রায় ৯০ একর। ছোট-বড় মিলিয়ে মহিষ রয়েছে ৪৭০টি। খামারের মূল উদ্দেশ্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে চাষিদের ষাঁড়-মহিষ সরবরাহ করা।
সকাল হতেই চারন ভূমিতে মহিষের অবাধ বিচরণ। পরে সারিবদ্ধ ভাবে নামানো হয় পুকুরে। বাগেরহাটের মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে শ্রমিকদের ব্যস্ত সময় শুরু হয় সকাল থেকেই।
সকালে কাঁচা ঘাস এবং বিকেলে খড়কুটো খাওয়ানো হয়। এরপর মহিষগুলোকে মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই শিফটে কাজ করেন শ্রমিকরা।
মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে উৎপাদিত দুধের গুণগত মানের জন্য প্রতিদিন সকালে লাইন পড়ে ক্রেতাদের। বর্তমান প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। গত কয়েকবছরে দুধের উৎপাদনও বেড়েছে খামারে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে খামার থেকে দুধ উৎপাদন হতো ৬৪ হাজার ৫৫৮ লিটার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯১১ লিটারে।
ছবি: মহিষের খামার
গরুর দুধের চেয়ে চারগুণ বেশি ঘন হয় মহিষের দুধ। তাছাড়া খাঁটি হওয়াতে ক্রেতারা ভীড় করেন ক্রেতারা।
মহিষের পরিচর্যা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। মহিষের স্বাস্থ্য দেখলেই বোঝা যায় পরিচর্যার ঘাটতি। সঠিক তদারকি এবং পরিচর্যার অভাবে মারা যাচ্ছে অনেক মহিষ।
দুধের উৎপাদন বাড়াতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে মহিষের জাত উন্নয়নে ২০২৩ সালের শেষের দিকে তিন দফায় ভারত থেকে আনা হয় ১৪৯টি পূর্ণ বয়স্ক মহিষ ও ১২০টি বাচ্চা মহিষ। পরে ওই বছরের ডিসেম্বর, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যায় ২১টি বাচ্চা মহিষ। এরমধ্যে ১০টি ভারত থেকে আনা ও ১১টি খামারের বাচ্চা মহিষ। তিন মাসে ২১টি বাচ্চা মহিষের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মনে করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। অতিরিক্ত ঠান্ডা ও ভারত থেকে আসার পথে মহিষ দুর্বল হয়ে পড়ায় এমন মৃত্যু হয়েছে বলছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
ভারতের হরিয়ানা প্রদেশ থেকে ৭ দিনের ভ্রমণের ধকল সামলাতে পারেনি বাচ্চা মহিষগুলো। এমনটাই জানালেন খুলনা জেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম।
এই খামারে রয়েছে জনবল সংকটও। রাজস্ব পদে ৫২ জন কর্মকর্তা, কর্মচারির পদ থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ১৩ জন। এছাড়া খামারে নেই কোনো ভেটেরিনারী সার্জন।
এত বড় খামারে ভেটেরিনারী সার্জনের একটি পোস্ট দরকার। যাতে যেকোন সময় কোন প্রাণী অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা যায়, এমনটাই জানালেন মহিষ উন্নয়ন ও প্রজনন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ড. আহসানউদ্দিন প্রামানিক
খামারের কাজকর্ম পরিচালনায় মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখলেও চলতি বছরের জুনে শেষ হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ।