দেশে এখন
0

লোডশেডিংয়ে নাকাল জনজীবন, উৎপাদন বন্ধ ৪০ প্ল্যান্টে

লুটপাতের খাতে পরিণতের অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের

তীব্র গরমে হঠাৎ লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় নাকাল জনজীবন। তাই বিগত ১৫ বছরে সক্ষমতার নানা গল্প শুনলেও লোডশেডিংয়ের কারণে আওয়ামী সরকারকেই দুষছেন রাজধানীবাসী। কর্তৃপক্ষ বলছে, গরমে চাহিদা বাড়লেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সংকট, বড়পুকুরিয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটি ও আদানি-এস আলমের সরবরাহ কম থাকায় দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে প্রতি দিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী সরকারের আমলে বিদ্যুৎখাতকে পরিণত করা হয়েছে লুটপাটের খাত হিসেবে।

সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে কয়েক দিন ধরেই বেড়েছে লোডশেডিং। রাজধানীর বাড্ডা, শাহজাদপুর, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও, আরামবাগসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, দিনে ও রাতে একাধিকবার চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। ফিরছে ঘণ্টারও বেশি সময় পর। অতিষ্ঠ জনজীবন, প্রভাব পড়ছে রুটিরুজিতে।

তবে, পতন হলেও এ অবস্থার জন্য রাজধানীবাসী দায়ি করছেন গত পনেরো বছরের আওয়ামী শাসনে বিদ্যুৎ খাতে গোঁজামিলের ইশতেহার বাস্তবায়নকেই। সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়টাতে তীব্র গরমে সর্বোচ্চ চাহিদা থাকায় বরাবরের মতোই লোডশেডিং করতে হয় বিদ্যুৎ বিভাগকে।

পিডিবির তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম ৯ দিনে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা উঠানামা করেছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে সাড়ে পনেরো হাজার মেগাওয়াটে। এর বিপরীতে প্রতিদিন লোডশেডিং করতে হয়েছে ৪০০ থেকে ১ হাজার ৯৭৩ মেগাওয়াট পর্যন্ত। যদিও সর্বোচ্চ ৬০০ মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনা ছিল পিডিবির।

সূত্র বলছে, দেশে মোট ১৪০টি পাওয়ার প্ল্যান্টের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ ৪০টি। বাকি ১০০টির মধ্যেও আংশিক বন্ধ আছে বেশকিছু পাওয়ারপ্ল্যান্ট। এছাড়াও মূল্য পরিশোধে বাকি পড়ায় চুক্তির চাইতেও প্রায় চারশো মেগাওয়াট সরবরাহ কমিয়ে আদানির বিদ্যুৎ আসছে এগারোশ মেগাওয়াটের মতো।

এদিকে কয়লা সংকট নয় বরং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকার কথা জানিয়েছে পিডিবি। তারা বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত এলএনজি টার্মিনাল তিন মাসেও মেরামত না হওয়ায় গ্যাস সরবরাহে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পুরোপুরি বিদ্যুৎ আসছে না বাঁশখালীর এস আলমের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকেও।

ফোনকলে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘১২ তারিখ থেকে বন্ধ হয়েছে। এটা চালু হলে একটা বড় সুবিধা পাওয়া যাবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে একটি সিন্ডিকেটের জন্য লাভজনক খাতে পরিণত করা হয়েছে। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘এইযে সংঘবদ্ধ একটা লুণ্ঠনকারী দল তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণে এ দল তৈরি হয়েছে, এলএনজি টার্মিনাল বানানো, গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে।’

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ বলেন, সেখানের হিসাবটার কোনো পাত্তা পাওয়া যায় না। এজন্য যে, এখানে বিল্ডিং তৈরি করতে হয়, মাটি গর্ত করতে হয়, মালপত্র আনতে হয়। এখানে ফ্যাকড়া আছে, জনগণ ভাববে এখানে বিরাট একটা পাওয়ার স্টেশন হচ্ছে। এইযে হচ্ছে সেখানে বিশাল অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়।’

বিদ্যুতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অর্থের পর্যাপ্ততার পাশাপাশি জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্র বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মত বিশেষজ্ঞদের। একইসঙ্গে ঢালাওভাবে সাজাতে হবে গত পনেরো বছরে চলা অরাজকতার এ খাতকে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, ‘জ্বালানি আমদানি, বিদ্যুৎ আমদানি এবং নিজস্ব জ্বালানি থেকে যখন আমরা ‍বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তখন একটা মিক্সচারের মাধ্যমে হয়। এটাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য যত বেশি সোর্স বা উৎস থাকবে এবং ফুয়েল ডাইভারসিটি থাকবে তত আমাদের ঝুঁকিটা কম থাকবে।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলন, ‘কাঠামো যদি স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক হয় তাহলে যেটি হয়, বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণ অপচয় হয়েছে এবং বিগত সময়ে সরকারের যে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে এর থেকে এক ধরনের মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’

দেশে সর্বোচ্চ ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও বিগত সরকারের দাবি ছিলো উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় তিরিশ হাজার মেগাওয়াট। সক্ষমতার চাইতেও দশ হাজার মেগাওয়াট বেশি উৎপাদন ক্ষমতার পেছনে ক্যাপাসিটি-ভর্তুকি গুনতে হয়েছে বছরে তিরিশ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন-২০১০ স্থগিতের মাধ্যমে এ খাত সংস্কারে হাত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এএইচ