এছাড়া জনপ্রশাসন সচিব, আইন উপদেষ্টা এবং পিএসসি সচিব বরাবর এই স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
আবেদনের বিষয়ে ৩৩তম বিসিএসের প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে অপেক্ষমাণ তালিকা হতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ সুপারিশ দেয়ার কথা বলা হয়।
আবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষা= ২০১২ এর বিজ্ঞাপন (স্মারক নং ৮০.২০০.০৪৬.০০.০০.০১৬.২০১২-৭০ তারিখ: ২৯ ফেব্রুয়ারি-২০১২) প্রকাশিত হয়। ২০১২ সালের ১ জুন বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯ পরীক্ষার্থী।
২৮ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। যেখানে ২৮ হাজার ৯১৭ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৮ হাজার ৬৯৩ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা ২০১৩ সালের ১২ মে থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষায় মোট ১৮ হাজার ১০৮ জন প্রার্থী অংশ নেন।
মৌখিক পরীক্ষার ৭২ দিন পর ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত পরীক্ষায় মোট ১৫ হাজার ৯৯১ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে ৮ হাজার ৫২৯ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সাময়িকভাবে সুপারিশ করা হয়। পদস্বল্পতার কারণে ৭ হাজার ৪৬২ জন প্রার্থীকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করা হবে বলে সুপারিশ করা হয়।
চিঠিতে চৌধুরী মো. জাফর বলেন, ‘৩৩তম বিসিএসে আবেদন করে পরীক্ষা দিলেও পদস্বল্পতার কারণে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়েও নন-ক্যাডার পদেও আমাদের চাকরি মেলেনি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করলেও অবস্থা বদলায়নি।’
তিনি আরো বলেন, ২০১০ সালের ১০ মে প্রজ্ঞাপন করে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা- ২০১০ জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছিল শূন্য পদের ৫০ শতাংশ বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করতে হবে। পরবর্তী বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত আগের বিসিএস থেকে নিয়োগ চলবে।
২০১৪ সালে এই বিধি সংশোধন করে ‘সংশোধিত বিধিমালা- ২০১৪’এর শর্তাবলি অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদের পাশাপাশি দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা পদেও নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়। যার ভিত্তিতে কর্ম কমিশন কর্তৃক মেধাক্রমানুসারে প্রস্তুতকৃত তালিকা থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার নিয়োগের লক্ষ্যে আবেদন গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় মেধা ও প্রচলিত কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগের জন্য সুপারিশও করা হয়।
আবেদনে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি তোলা হয়েছে। এগুলো হলো- ২০২৪ সালের ২৮ মে একটি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, যেহেতু সরকারি চাকুরিতে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭টি পদ ফাঁকা আছে, সুতরাং বর্তমান সরকারের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সংস্কার প্রয়োজন। তাই আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে আমাদেরকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ প্রদানে প্রজ্ঞাপন জারি করে চাকরির সুব্যবস্থা করার।
যেকোনো চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘ভাইভা’একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়োগ পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষ ধাপে ভাইভার সম্মুখীন হতে হয়। এমন অবস্থায় বিসিএসে ২০০ নম্বরের ভাইভা প্রিয়জন প্রীতি বা দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ভাইভার মার্কের ওপর ভিত্তি করে অনেক সময় ক্যাডার, নন-ক্যাডার নির্ধারিত হয়। কেননা একজন সাধারণ প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষায় বেশি মার্ক থাকা সত্ত্বেও ভাইভায় কম নাম্বার দেওয়া এবং একজন দলীয় প্রার্থীর লিখিত নাম্বার কম থাকা সত্ত্বেও ভাইভায় বেশি মার্ক দিয়ে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে আমরা ৩৩তম বিসিএস নিয়োগ বঞ্চিত নন-ক্যাডারদের পক্ষ থেকে আমাদের ভাইভার মার্ক পুনরায় তদন্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া গত ৭ জুলাই বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এবং অন্যান্য নন ক্যাডারের ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশ্ন ফাঁসের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন।। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত পরীক্ষাগুলোতে ফাঁসকৃত প্রশ্ন নিয়ে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরকে শনাক্ত করে চাকুরিচ্যুত করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের জায়গায় নিয়োগ বঞ্চিতদের নিয়োগ দেয়া এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।