কিশোর ওমর ফারুকের কর্মব্যস্ততা যেন নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হেনেছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। দেশ পুর্নগঠন করতে বন্যার্তদের সাহায্যে করতে নেমে পড়েছেন নবম শ্রেণি পড়ুয়া এই ক্ষুদে শিক্ষার্থী।
মনের ভিতর অফুরান দেশপ্রেম আর ভালো কিছু করার সদিচ্ছা প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে তার মনে। শরীরের ক্লান্তিকে তুচ্ছ করে আর্ত মানবতোর সেবায় সপে দিয়েছেন নিজেকে। পড়াশোনার সাময়িক ক্ষতি হলেও দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে খুশি ওমর ফারুক।
ওমর ফারুক বলেন, ‘সাময়িক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু মন থেকে ভালো লাগছে। আমার শরীর ব্যাথা হয়ে আছে তবু কাজ করতে ভালো লাগছে।’
শুধু ওমর ফারুকই নয়, তার মতো অল্প বয়সীরা নিজেদের বঞ্চিত করতে চাইছে না অসহায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর এই সুযোগ থেকে। তাইতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কচি হাতে তৈরি করছেন মোয়ার প্যাকেট। আবার কেউ এসেছেন গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিতে না পারার আক্ষেপ ঘোচাতে কেউবা আবার এসেছেন দেশের প্রতি দায়িবত্বোধ থেকে।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘কষ্ট হবে কেন এইটাতো দায়িত্ববোধ থেকে করা।’
টিএসসিতে শিশু ও শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আসা অভিভাবকরা বলছেন বৈষম্যহীন বাংলাদেশে মানবিক নাগরিক হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই সন্তানদের নিয়ে এসেছেন ত্রাণ কার্যক্রমে। সন্তানদের প্রস্তুত করছেন আগামীর বাংলাদেশের জন্য।
অভিভাবকদের একজন বলেন, ‘আমি যখন থাকবো না তখন ওর বলার কেউ থাকবে না। তাই এখন এই কাজের মাধ্যমে ওকে দেশের প্রতি দায়িত্ব শেখাচ্ছি।’
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতো শুরু থেকেই ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ করছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। রাজধানীর সাতারকুলে দেড় হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক প্রতিদিন ওজনে মেপে তৈরি করছে ১৬ কেজির প্যাকেট। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, বন্যার্তদের সহযোগিতার পাশাপাশি পূনর্বাসন নিয়ে কাজ করছেন তারা ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজধানীর অদূরে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, এক ও অভিন্ন চিত্র। চলছে ত্রাণ সংগ্রহের বিশাল কর্মযজ্ঞ। শিশু, কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধ, সবার চেতনায় দেশপ্রেম। সংকটে কিংবা দুর্যোগে একতাবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের স্পৃহা সবার চোখে।