ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে ফের বানের জলে ভাসছে ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার শতাধিক গ্রামের মানুষ। পানিবন্দি রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ফেনী-বিলোনিয়া স্থল বন্দর সড়কে কোমর পানি। চরম ভোগান্তিতে স্থানীয়রা৷
চলতি বর্ষা মৌসুমে তৃতীয়বারের মতো বানের জলে ভাসছে ফেনীর উত্তরের উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার ১০০টির বেশি গ্রামের মানুষ। আবার ডুবেছে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বসতি ও ফসলি জমি।
এর আগে গত জুনের শুরুতে মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। জোড়াতালির মেরামতের পর চলতি মাসের শুরুতে বাধের আরও ১২টি স্থানে ভেঙে প্লাবিত হয় শতাধিক গ্রাম। অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ছাড়িয়ে যায় ৩০ কোটি টাকার বেশি। ১৫ দিনের মাথায় আবার বন্যা দেখা দেয় এ অঞ্চলে। দিশেহারা সীমান্তবর্তী ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার বাসিন্দারা।
বারবার বানের জলে দুর্ভোগের বিষয়ে স্থানীয়রা দুষছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা বাধ মেরামতকে।
স্থানীয় একজন বলেন, 'দুই মাসের মধ্যে তিনবার বন্যা হয়েছে। কোনো বাধের ওপরই সরকারের গুরুত্ব নেই। প্রতিবছর যে বাজেট হয় সে বাজেট অনুযায়ী কাজ হয় না।'
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দ্বিতীয় দফার বন্যার পর তারা বাধ মেরামতের সুযোগই পাননি। অপরদিকে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, শুকনো খাবারসহ সামগ্রিক সহায়তায় মাঠে আছেন তারা।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, 'এই অস্বাভাবিক পানির কথা আশেপাশের স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তারা বলেছে গত ৫০ বছরে এমন পানি দেখেনি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা এটা দ্রুত মেরামত করে দেবো।'
চলতি বর্ষা মৌসুমের বন্যায় ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার ২০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে আখাউড়া স্থলবন্দরে জলাবদ্ধতা, ব্যাহত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য
পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানির তোড়ে আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের বেইলি সেতু ভেঙে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমদানি-রপ্তানিকারকদের বেশ কয়েকটি অফিসও পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়াও টানা বৃষ্টিপাতে দীঘিনালা-বাঘাইহাট- সাজেক সড়কের কবাখালী ও বাঘাইহাট বাজারের সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকে শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন।
মৌলভীবাজারের সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুলাউড়ার টিলাগাঁওয়ে মনু নদীর বেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত। চারটি ইউনিয়নের ধলাই নদীর ছয়টি ভাঙ্গনে প্রায় ৬০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন, পানিবৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
টানা বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীর পৌর এলাকাসহ জেলার ৯টি উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ, বন্ধ আছে জেলার সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে গোমতী নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। যদিও এখনও বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে দুই পাশের বাধ। বাধের ভেতরের চরে বসবাসরত অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ইতিমধ্যে তলিয়ে গিয়েছে। বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন বেড়িবাধে। শিশু, বৃদ্ধ ও গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে চরের বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড গোমতীর দু'তীরে নাজুক অবস্থায় থাকা স্থানগুলো মেরামতের কাজ করছে বলে জানান কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান। তিনি আরো জানান গোমতীতে গেল ১৫ বছরে উজান থেকে আসা এতো পানি দেখা যায় নি।