দেশে এখন
0

চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোয় কাঁতরাচ্ছেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ অর্ধশত মানুষ

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনো অর্ধশত মানুষ কাঁতরাচ্ছেন চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোয়। রক্তক্ষয়ী সেই আন্দোলন সফল হলেও আহতদের শারীরিক যন্ত্রণা সহজে পিছু ছাড়ার নয়। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা এড়াতে পারছেন না কেউ কেউ। তবুও তাদের কণ্ঠে দেশের কথা, চোখে সুখী-সমৃদ্ধ; নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশের খোয়াব, যেখানে নিরাপত্তা থাকবে তাদেরও।

টাকার অভাবে এসএসসি পাশ করার পর পড়ালেখার সৌভাগ্য হয়নি তানভিরুল ইসলামের। কাজ খুঁজছিলেন ২৪ বছর বয়সী এই তরুণ। আগস্টের উত্তাল আন্দোলনে জাতীয় পতাকা হাতে যোগ দেন মিছিলে। এ সময় গুলি এসে বুকে লাগে। ভাগ্যগুণে প্রাণে বাঁচলেও যন্ত্রণায় ছটফট করছেন হাসপাতালের বিছানায়।

নিজ বিছানার পাশে যত্নে আগলে রাখা সে পতাকায় নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ।

গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারী তানভিরুল ইসলাম বলেন, 'কয়েকজনছাত্র ছিল তারা আমাকে নিয়ে আসছে পরে মোবাইল থেকে ঠিকানা নিয়ে আমার আম্মুকে কল দিয়ে জানায়।'

আন্দোলনকারীদের আরেকজন শাহ আকিব। মহানগরীর একটি মাদ্রাসার আলীম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আদরের বোনকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে যান পরিবারের কাউকে না জানিয়েই। গুলিবিদ্ধ হন সিআরবি এলাকায়। আহত হয় তার বোনও। এখন হাসপাতালের বিছানায় লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে।

গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারী শাহ আকিব বলেন,  ‘আমি পালাতে গিয়ে বুলেট এসে লাগে।’

এমন প্রায় ৩৫ জন আহত রোগী এখনও কাতরাচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর বেসরকারি হাসপাতাল মিলে যার সংখ্যা অর্ধশত। চিকিৎসকরা বলছেন, আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৩৪৩ জন রোগী ভর্তি হন। যাদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ।

তবে আন্দোলন সফল হওয়ায় এখন স্বস্তি ফিরেছে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এসব মানুষের মনে। রক্ত দিয়ে যে আন্দোলন সফল হলো তার পরবর্তী বাংলাদেশকে হিংসা, সংঘাতমুক্ত শান্তির পরিবেশে দেখতে চান আহত ও তাদের স্বজনরা।

গুলিবিদ্ধ একজন বলেন, 'পাঁচটা গুলি লাগে। এখন ভালো লাগছে দেশটা স্বাধীন হয়েছে। আর এরকম সংঘাত চায় না।'

অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরই আহতদের সুচিকিৎসার নির্দেশ দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহনের কথা বলা হয়। সেই সাথে আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান বলেন, 'এই পরিবারগুলোর পাশে থাকার জন্য  আমরা সরকারি-বেসরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করবো।'

ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে হয়তো একদিন বৈষম্যহীন, হানাহানিমুক্ত হবে লাল সবুজের বাংলাদেশ। তবে ভয়ংকর এ দিনগুলোর স্মৃতি হয়তো সারা জীবন তাড়া করবে তাদের।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর