পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসক হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ভারতে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৪ আগস্ট) রাত দখল কর্মসূচির ডাক দিয়ে রাজপথে নেমে আসে কলকাতার হাজারো নারী। রাতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজপথ দখলে নেয় তারা। এর আগে কলকাতার নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেয় লেখক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এ সময় তারা রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
স্থানীয় সময় বুধবার মধ্যরাতে মেয়েদের রাত দখল কর্মসূচির মিছিলে আচমকা হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। রড ও লাঠি নিয়ে আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে হাসপাতাল চত্বরে তাণ্ডব চালায় তারা। জরুরি বিভাগের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। লন্ডভন্ড করে ফেলে হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার, এইচসিসিইউ, সিসিইউ, ওষুধের স্টোররুম। ভেঙে চুরমার করে হাসপাতালের বেড ও আসবাবপত্র। এরপর ভাঙচুর চালানো হয় আন্দোলনকারীদের মঞ্চেও।
একজন আন্দোলনকারী বলেন, 'স্টুডেন্ট পাওয়ার কাকে বলে সেটা মনে হয় না সারা পৃথিবীতে আর কাউকে বুঝিয়ে দিতে হবে, বাংলাদেশ সেটা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের যে আন্দোলনের আলো সেটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ওপর পড়েছে।'
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নামানো হয় র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। এ সময় দুর্বৃত্তরা পুলিশ ফাঁড়িসহ পুলিশের কয়েকটি গাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। এতে আহত হন আন্দোলনকারীসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তবে, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। হামলাকারীদের পরিচয়ও অজানা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলাকারীদের অনেকেই মিছিলের মধ্যে ছিল। 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' লেখা টি-শার্ট গায়ে বিচার চাই স্লোগানও দিচ্ছিলেন তারা। দুর্বৃত্তরা প্রথমেই জরুরি বিভাগে হামলা চালায়। হাসপাতালের এক কর্মী জানান, ক্রাইম স্পটে পৌঁছাতে পারেনি হামলাকারীরা। সেই জায়গার সিসিটিভি ক্যামেরাও সচল আছে।
এই ঘটনার পর একে অপরের দিকে আঙুল তুলছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপি। তৃণমূলের অভিযোগ, হামলার নেপথ্যে সিপিএম ও বিজেপির হাত আছে। অন্যদিকে, পুরো ঘটনার দায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাড়ে চাপিয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, মামলার আলামত ধ্বংস এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দলের গুন্ডাদের লেলিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'হাসপাতালের আশেপাশে কাউকে যেতে দেয়া যাচ্ছে না। সত্য লুকিয়ে রাখার জন্য তারা পুরো এলাকা নিজেদের দখলে রেখেছে। এর পেছনে তৃণমূল কংগ্রেস ও তাদের সহযোগিতা জড়িত।'
এদিকে, পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে। তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয় মামলার তদন্তভারও। পুলিশ বলছে হাসপাতালের বাইরে ও ভেতরে দুই জায়গাতেই আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে তারা। পুলিশ বাহিনীর বদনাম করতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। ঘটনার শুরু থেকেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। নানা গুজব ও ভুল সংবাদ প্রচার করে কলকাতা পুলিশের সম্মানহানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রাজ্যের পুলিশ কমিশনারের।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গয়াল বলেন, 'কলকাতার পুলিশ শুরু থেকেই রাতদিন কাজ করেছে এই মামলার জন্য। মামলার সব আলামত সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রধান অভিযুক্তকেও গ্রেপ্তার করেছে কলকাতার পুলিশ। কিন্তু তাদের নিয়েই নানা গুজব ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।'
গেল শুক্রবার আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জুনিয়র এক নারী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে শুরু হয় এর প্রতিবাদে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষোভে ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা ভারতে। যার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও। ইতোমধ্যেই হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।