উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হত্যাচেষ্টা নতুন নয়

সর্বোন্নত দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতা নতুন নয়। দেশটিতে প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ওপর হামলার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অতীতে চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন গুপ্তহত্যার শিকার। হামলার শিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর তালিকা আরও লম্বা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর শনিবারের হামলার আগে মার্কিন রাজনীতির ইতিহাসে সহিংসতার শিকার হয়েছেন আরও অনেক প্রেসিডেন্ট, সাবেক প্রেসিডেন্ট আর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

১৭৭৬ সালে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি কলঙ্কিত হয়েছে বহু গুপ্তহত্যা আর হত্যাচেষ্টায়। তালিকায় প্রথম নাম আব্রাহাম লিঙ্কন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল ১৬তম এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ওয়াশিংটনের ফোর্ডস থিয়েটারে গুলি করে জন উইল্কস বুথ নামের এক ব্যক্তি। মাথার পেছনে গুলিবিদ্ধ লিঙ্কন মারা যান পরদিন। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারে সমর্থন দেয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে ধারণা। এর ১২ দিন পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে নিহত হন ভার্জিনিয়ায় পলাতক লিঙ্কনের হত্যাকারী।

লিঙ্কনের পর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান যুক্তরাষ্ট্রের ২০তম প্রেসিডেন্ট জেমস আব্রাম গারফিল্ড। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ছয় মাসের মাথায় নিহত হন তিনি। ১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটনের রেল স্টেশনে তাকে গুলি করে চার্লস গিটাউ নামের এক ব্যক্তি। কয়েক সপ্তাহ পর মারা যান বুকে গুলিবিদ্ধ গারফিল্ড। দোষী সাব্যস্ত গিটাউয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ১৮৮২ সালের জুনে।

১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বাফালোতে ভাষণ দেয়ার পর পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ হন ২৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলি। সেরে উঠবেন বলে চিকিৎসকরা আশাবাদী হলেও গুলিবিদ্ধ হওয়ার আটদিন পর, দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসের মাথায়, গ্যাংগ্রিনে মৃত্যু হয় ম্যাককিনলির। তার হত্যাকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত লিওন চোগোশকে ইলেক্ট্রটিক চেয়ারে রেখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় পরের মাসেই।

১৯৬৩ সালের নভেম্বরে ৩৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে গুলি করে হত্যা করে লি হার্ভি অসওয়াল্ড নামের এক ব্যক্তি। গ্রেপ্তারের পর কারাগারে স্থানান্তরের সময় অসওয়াল্ডকে গুলি করে হত্যা করে জ্যাক রুবি নামের আরেক ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রে হত্যাকাণ্ডের শিকার চতুর্থ প্রেসিডেন্ট কেনেডি।

এখানেই শেষ নয়। প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যার পাঁচ বছর পর, ১৯৬৮ সালে তার ভাই রবার্ট এফ কেনেডিও গুপ্তহত্যার শিকার হন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন নিহত সিনেটর কেনেডি। ১৯৭২ সালে আরেক ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জর্জ ওয়ালেস আততায়ীর গুলিতে প্রাণে বাঁচলেও কোমর থেকে নিচে দেহের বাকি অংশ অবশ হয়ে যায় তার।

ব্যর্থ হত্যাচেষ্টার তালিকা আরও দীর্ঘ। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মায়ামিতে ভাষণ শেষে ফেরার পথে, হামলা হয়েছিল ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের ওপর। ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই হামলায় রুজভেল্ট প্রাণে বাঁচলেও নিহত হন তার সঙ্গে গাড়িতে থাকা তৎকালীন শিকাগো মেয়রের। ১৯৫০ সালে দুই বন্দুকধারীর হামলা থেকে বেঁচে যান রুজভেল্টের উত্তরসূরী হ্যারি ট্রুম্যান।

এ তালিকায় আরও আছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট, দুইবার হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া জেরাল্ড ফোর্ড, রোনাল্ড রিগ্যান, জর্জ বুশ সিনিয়র ও জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা, এমনকি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় নস্যাৎ হয়ে যায় বেশিরভাগ হামলার পরিকল্পনা।