ফুলছড়ির গাবগাছি চরের মতো গাইবান্ধার চর-দ্বীপচরবাসীর ভোগান্তিও চরমে। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমায় উঠলেই প্রতি বর্ষায় উজানের ঢল ধুয়ে মুছে নিয়ে যায় ভাটির এ জনপদের মানুষের সারা বছরের আয়-রোজগার। লাভক্ষতির অঙ্কে ফলাফল শূন্য হলেও দুঃখ, দুর্দশাকে নিয়তি মনে করেই জীবন চলে এই অঞ্চলে।
বন্যা কবলিতরা বলেন, বন্যায় সব নিয়া যায়। গরু-বাছুর, ঘরবাড়ি কিছুই রাখতে পারি না। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। সারা বছর যা রোজগার করি সবই বন্যায় ভেসে যায়। আমাদের খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হয় না। স্থায়ী বাঁধ না হওয়ায় প্রতিবছর আমাদের দুর্ভোগটা পোহাইতে হয়।
উত্তরের জেলা গাইবান্ধাসহ দেশের প্রায় ১০ শতাংশ চরভূমিতে আবাদ হয় ৯ লাখ ১১ হাজার একর। যেখানে ফসলের আবাদ আর গবাদি পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন চরাঞ্চলের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। প্রায় ৩৬ লাখ একর বালুচরের পুরোটাই আবাদযোগ্য করা হলে প্রাণিসম্পদ বাদে শুধু এসব জমি থেকে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হতে পারে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু এসব চরাঞ্চল নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা নেই। গবেষকরা বলছেন, হাওর বা পার্বত্য অঞ্চলের মতো চরের জন্য আলাদা পরিকল্পনা দরকার এখন।
চর ডেভলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, 'চর ডেভলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশে চরের জন্য একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান। সমবায় বিভাগ এই সেন্টারকে ইনস্টিটিউটে পরিণত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।'
জেলা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম আবদুস সালাম বলেন, 'তাদের জন্য আলাদা করে নিশ্চয়ই বিকল্প ব্যবস্থা ভাবা দরকার। প্রতিবছরই বন্যা হচ্ছে। সরকার যদিও চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ থাকলে আলাদা একটা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তারা মানুষের জন্য কাজ করবে।'
বন্যা-ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে চরবাসীদের রক্ষা ও চরাঞ্চলকে মূল্যবান সম্পদে রূপান্তরে সরকারের কোন পরিকল্পনা আছে কি?
গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, 'চরাঞ্চলের মানুষের টেকসই জীবনযাত্রার জন্য আমরা আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। ১২০০ কোটি টাকার একটা ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি অতিদ্রুত পাশ হবে। আমরা স্থায়ী বাঁধ দিয়ে রক্ষার জন্য চেষ্টা করছি।'
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন বলছে এসব চর-দ্বীপচরসহ প্রতিবছর বন্যায় দেশে ১১ হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের ক্ষতি হয়।