এশিয়া
বিদেশে এখন
0

ভারতের আসামে বন্যায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ২৪ লাখ ছাড়িয়েছে

ভারতের আসামে বন্যায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৪ লাখ। মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৬৪ জনের। আশ্রয় হারানো, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, শস্যের ক্ষতি ও গবাদি পশুর মৃত্যুতে জীবিকা ঝুঁকিতে- সবমিলিয়ে তীব্র হাহাকার চতুর্দিকে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ধুবরি জেলায় পরিস্থিতি সবচেয়ে করুণ। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গেও।

রাজ্যের অন্য সব অঞ্চলের সাথে প্লাবিত ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকাগুলোও। বাড়ছে প্রাণহানি। শহর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাসিন্দারা।

ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের তথ্য, আসামের প্রাদেশিক রাজধানী গুয়াহাটিতে ব্রহ্মপুত্রে পানির উচ্চতা নিম্নমুখী হলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে কমপক্ষে চারটি পয়েন্টে।

ধানসিঁড়িসহ ছয়নি শাখা নদী আর বরাক ও বরাকের শাখা নদীতেও পানি বিপৎসীমার ওপরে। রাজ্যের উঁচু এলাকাগুলোতে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা চলছে নিম্নাঞ্চলে। দুই রাতে আরও আট লাখ মানুষ নতুন করে পানিবন্দি অবস্থায় পড়েছে, ৩০ জেলায় মোট বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ২৪ লাখের বেশি।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ধুবরি জেলা, পানিবন্দি পৌনে আট লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে এক লাখ ৫৭ হাজার একর আবাদি জমি। ১১২টি কর অঞ্চলের সাড়ে তিন হাজারের বেশি গ্রাম পানির নিচে।

বন্যা কবলিতদের একজন বলেন, 'তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। পানিবন্দি এলাকা পেরিয়ে ইলেক্ট্রিশিয়ানরা এ পর্যন্ত আসতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক পোল মেরামতে ট্রাক্টর নিয়ে আসছে কেউ কেউ। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সবাই আটকে আছে।'

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝড়, বন্যা, ভূমিধসে প্রাণহানি পৌঁছেছে ষাটের ঘরে। চলছে উদ্ধার ও ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম। ৭০০ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ। পানিবন্দি সোয়া সাত লাখ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ত্রাণসামগ্রী, জানিয়েছে রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। কৃষকদের জন্য ৩৮১ কোটি রুপির বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী। কাজিরাঙা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের শতভাগ প্লাবিত হওয়ার দু'দিন পেরিয়ে গেলেও কমেনি বন্যার পানি।

হাতিমোড়া এলাকায় দু'চারদিন আগে থেকেই পানি বাড়ছিল এবং গতকাল বাঁধ ভেঙে ২৫-২৬টা গ্রাম তলিয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, 'লোকজন বিপদে পড়ে গেছে। ঘরে ভেতর পানি, থাকার জায়গা নেই, শিক্ষার্থীদের পড়া বন্ধ, খাওয়া তো দূরের কথা। ত্রাণ আসার কথা ছিল কিন্তু আসেনি।'

রাজস্থানের উত্তরপূর্বে দু'টি এবং উত্তরপূর্ব রাজস্থান থেকে ঝাড়খণ্ডের পশ্চিমাঞ্চল হলে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা সাইক্লোনিক বায়ুচাপের প্রভাবে রাজস্থান-ঝাড়খণ্ডের থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ওড়িষা, বিহার, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশসহ ,মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, হরিয়ানা, চন্ডিগড়, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখন্ড, মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড়সহ ভারতের বড় অংশে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

গেল জুন মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টি হয়েছে। তবে চলতি মাসে বেশি বৃষ্টিপাতের আভাস ছিল আগেই। এ সময়ে গুরুতর বন্যার ধকল সামলেছে রাজধানী দিল্লি, মনিপুর ও গুজরাটের বিভিন্ন অঞ্চল।