জামালপুরের মাদারগঞ্জে উপজেলার ষাটোর্ধ্ব রোবিনা বেগমের সংসারে আয় করার মতো কেউ নেই। শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে ৬৩ লাখ টাকা আমানত রাখেন শতদল বহুমুখী সমিতিতে। শুরুর দিকে লাভের টাকা পেলেও কিছুদিন যেতেই বাঁধে বিপত্তি। বর্তমানে সমিতির অফিসে তালা ঝুলতে দেখে শেষ সম্বল হারানোর শঙ্কায় আছেন রোবিনা বেগম।
তিনি বলেন, '৬৩ লাখ টাকা অনেক কষ্ট করে শতদলে রাখছি। আমি রোগী মানুষ, ওখান থেকে টাকা তুলে ওষুধ খাই। ওরা বলছিল যে যখন আসবেন, তখনই টাকা পাবেন। সেজন্য সেখানে টাকার রাখছিলাম।'
শুধু রোবিনা বেগমই নয়, আশি ঊর্ধ্ব আনোয়ারা বেগম, সুশান্ত চন্দ্র ঘোষ, নূরজাহানের গল্পও কিছুটা একইরকম। বেশি মুনাফার লোভে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা এমন সমবায় সমিতিতে ছিন্নমূল মানুষ থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, গৃহিণী, প্রবাসীসহ বিভিন্ন পেশার অন্তত ৫০ হাজার গ্রাহক আমানত জমা রাখেন। এর মধ্যে আল-আকাবা আর শতদল বহুমুখী সমিতির নামেই রয়েছে অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের হাজার কোটি টাকার উপরে আমানত।
মাদারগঞ্জ শহরের বিভিন্ন জায়গায় নানা নামে গড়ে উঠেছে বহুমুখী সমবায় সমিতি। বর্তমানে প্রায় সবগুলো সমিতির কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। সমিতির মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি ডিবি পুলিশ মাদারগঞ্জে অভিযান চালিয়ে শতদল এবং নবদ্বীপ নামে দুই বহুমুখী সমবায় সমিতির ৬ কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করলেও মালিকপক্ষের লোকজন ধরা ছোঁয়ার বাইরে আছেন।
জামালপুরের মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, 'কোনোভাবেই সমবায় অফিস দায় এড়াতে পারে না। কারণ তারা নিবন্ধন দিয়েই চুপ করে বসে থাকতে পারে না, তাদের তদারকি তরা উচিত ছিল। এখন গ্রাহকদের উচিত আইনের আশ্রয় নেয়া।'
মাদারগঞ্জ উপজেলা সমবায় সমিতির কর্মকর্তা জানান, সমবায় আইনে ব্যাংকিং কার্যক্রম করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
জামালপুর মাদারগঞ্জ উপজেলার সমবায় অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, '২৫ থেকে ২৬টি সমবায় সমিতির তথ্য আমাদের রিস্কের মধ্যে আছে। তাদের তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি। এটার বিষয়ে আমাদের প্রক্রিয়া চলমান আছে। এখানে ৮০০ কোটি টাকার বেশি তাদের কাছে গ্রাহকদের পাওনা আছে।'
সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়ে যারা ব্যাংকিং কার্যক্রম করে হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে গা ঢাকা দিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার কথা বলছেন জেলার শীর্ষ এই দুই কর্মকর্তা।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান বলেন, 'এ বিষয়টি নিয়ে যে তদন্ত কমিটি রয়েছে তারা এরই মধ্যে আমাদের কাছে রিপোর্ট দিয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে তারা এ রিপোর্ট পেশ করেছে। পূর্ণাঙ্গরূপে তথ্য পাওয়া গেলে বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবো।'
জামালপুরের পুলিশ সুপার মো' কামরুজ্জামান বলেন, 'ধারণা করা হয় যে কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় এখানে। এই মামলাগুলো আমরা দেখছি। আমরা প্রোপার ওয়েতে এই বিষয়গুলো তদন্তের মধ্যে রাখছি।'