প্রবাস
0

আরব আমিরাতের বাজারে বাড়ছে বাংলাদেশিদের ব্যবসা

উঁচু উঁচু দালান আর নগরের চাকচিক্য-পর্যটকদের কাছে সংযুক্ত আরব আমিরাত মানে আভিজাত্য। তবে, নামি-দামি শপিংমলের বাইরে স্থানীয় বাজার ও দোকানপাটে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন পর্যটকদের একটি বড় অংশ। এমনই একটি জায়গা ফুজাইরাহ শহরের অদূরে পাহাড়ের কোলঘেঁষে থাকা মাসাফি ফ্রাইডে মার্কেট। সেখানে তাজা ফলের পসরা সাজিয়ে বসেন শত শত বাংলাদেশি।

পাহাড় ঘেঁষে এগিয়ে যায় আঁকাবাঁকা রাস্তা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাদেশিক শহর ফুজাইরাহ থেকে এই রাস্তা ধরে ৩৫ কিলোমিটার দূরে গেলে চোখে পড়বে মাসাফি 'ফ্রাইডে মার্কেট'। স্থানীয়রা আরবিতে একে বলেন 'সুক আল জুমা'।

দুবাই-শারজাহ-ধেহদ-ফুজাইরাহ মহাসড়কের দুই পাশে বিস্তৃত এই বাজারে রয়েছে কয়েকশ' দোকানপাট। স্থানীয় ও বিদেশিদের পাশাপাশি এই দোকানগুলোর বড় একটি অংশের মালিক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের মুখে মুখে শোনা যায় বাজারটির গল্প। কয়েক দশক আগে প্রতি শুক্রবার স্থানীয় কয়েকজন কৃষক নিজেদের উৎপাদিত পণ্য ট্রাকে করে এখানে নিয়ে আসতেন। জুমার নামাজ আদায়ের পর ট্রাক থেকে জিনিসপত্র খালাস করে পথের পাশে স্টলের মতো করে এসব পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে সাজিয়ে রাখতেন। সড়কপথে যাত্রাবিরতিতে এসব কৃষিপণ্য কিনতেন ভ্রমণকারীরা। সেই থেকে মাসাফি ফ্রাইডে মার্কেটের গোড়াপত্তন হয়।

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দিনে দিনে বাড়তে থাকে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা। বড় হয় বাজারের পরিধি। শুক্রবার ছাড়াও অন্যান্য দিনে ভিড় জমে বাজারে। একপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা স্থানীয়দের সহায়তায় তৈরি করেন ছোট ছোট দোকান। ভাড়া কম হওয়ায় দিনে দিনে বৃদ্ধি পায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা। পরে রূপান্তরিত হয় পূর্ণাঙ্গ বাজারে।

স্থানীয়ভাবে চাষ করা কৃষিপণ্য ও ফলফলাদি এই বাজারের বিশেষ আকর্ষণ। স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও বাজারটিতে রাশিয়া, জার্মানি ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসা পর্যটকের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। শুক্রবার ছাড়াও ছুটির দিনগুলোতে ক্রেতা দর্শনার্থীর ভিড় লেগে থাকে। গ্রীষ্মের চেয়ে শীত মৌসুমে স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে এই বাজার পরিণত হয় পর্যটকের মিলনমেলায়।

এতজন বিক্রেতা বলেন, 'এখানকার বেশিরভাগ ক্রেতা স্থানীয়রা। এছাড়াও বিদেশিরা এখান থেকে অনেক জিনিস কিনে থাকে। শীতকালে বিদেশিরা বেশি আসে।'

মৌসুমি ফলের চাহিদা মেটাতে এই বাজারের জুড়ি নেই। আর এসব ফল বিক্রেতাদের বড় অংশ হলো প্রবাসী বাংলাদেশি। দোকান মালিকরা স্থানীয় হলেও তাদের থেকে ইজারা নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান, মিশরসহ কয়েকটি দেশের প্রবাসীরা। চার থেকে ছয়জন পর্যন্ত কর্মী কাজ করেন প্রতিটি দোকানে।

বাংলাদেশিদের ফলের দোকান ছাড়াও এখানে কার্পেট, মাটির তৈরি জিনিসপত্র, বিছানাপত্র, নার্সারিসহ স্থানীয় প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যের বেশকিছু দোকানপাট রয়েছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে বাহারি কার্পেট আর ইরান থেকে আমদানি করা হয় মাটির তৈরি জিনিসপত্র। আর আড্ডার জন্য আছে কফি হাউস ও চায়ের দোকান। বন্ধুসুলভ আচরণ ও উদার মানসিকতার জন্য বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের প্রশংসা কুড়িয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

এসএস