জামালপুরের মাদারগঞ্জের পাকরুল গ্রামের বাসিন্দা ফকির আলী। ৫৮ বছরের জীবনে বহুবার বসতবাড়ি বিলীন হতে দেখেছেন আগ্রাসী যমুনায়। নদীর করাল গ্রাসে বাপ দাদার পৈত্রিক ভিটে-মাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থিতু হলেও পিছু ছাড়েনি যমুনা। গত বছর বিলীন হয়েছে সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পও। এখন অন্যের জমিতে ছাপড়া ঘর তুলে করছেন বসবাস।
যমুনার ভাঙ্গন কবলিত ভোক্তভোগী মো. ফকির আলী বলেন, '২৭ বার আমার বাড়ি ভেঙ্গেছে। যার বাড়ি ভেঙ্গেছে সেই কিন্তু বেদনা জানে।'
ফকির আলীর মতো এমন গল্প পাকরুল গ্রামের শত শত পরিবারের। বর্ষা এলেই পানি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ভাঙন। কয়েক বছরে যমুনার নদী তীরবর্তী ৫ গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন। হারিয়ে গেছে অন্তত কয়েকশ' একর ফসলি জমি।
এবারও ভাঙন হুমকিতে পাকরুল গ্রামসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের বহু বসতবাড়ি, ফসলিজমিসহ কয়েকটি মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের দাবি, নদী ভাঙন শুরু হলে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। এতে ভাঙন আটকানো যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন বলেন, 'জমি যা ছিল তা নদী ভাঙ্গনে সব বিলীন হয়ে গেছে। এখন নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।'
ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নিমার্ণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং করা হচ্ছে। এছাড়াও, ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি ১৫শ’ মিটার অংশে একটি ভাঙ্গন রোধে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।'
চরপাকেরদহ ইউনিয়ন ছাড়াও বর্ষার শুরুতেই দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলায় নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।