২০২৪ সালকে নির্বাচনের বছর বললে ভুল হবে না। এ বছর বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ চর্চা করবেন নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো বেশ কয়েকটি দেশ বেঁছে নিয়েছেন নিজেদের জনপ্রতিনিধিদের। আর এসব নির্বাচনে বারবারই আলোচনায় এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপফেকের প্রভাব।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ডিপফেক হয়ে ওঠে ৬ কোটি ডলারের বাজার। পর্দার তারকাদের ভিডিও ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে ও বিপক্ষে চালানো হয় প্রচারণা। নির্বাচনের প্রায় ২ মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে ওঠে মাথাব্যথার কারণ। এআই জেনারেটেড ভয়েজ ব্যবহার করে ভোটারদের কল দেয়া হয় ৫ কোটি বারের বেশি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী ভোটারদের মতকে প্রভাবিত করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন গবেষকরা। ২০২৩ সাল থেকে ১১২টি জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে দ্য অ্যালেন টুরিং ইন্সটিটিউট। ব্রিটেনের ডেটা সাইন্স বিষয়ক প্রতিষ্ঠানটির দাবি, মাত্র ১৯টি নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সরাসরি প্রভাব শনাক্ত করা গেছে। তবে গবেষকদের দাবি নির্বাচনগুলোয় ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরির মতো এআই এর পরোক্ষ প্রভাব ছিল বেশি।
দ্য অ্যালেন টুরিং ইন্সটিটিউট গবেষক স্যাম স্টকওয়েল বলেন, 'সরকার ও তথ্যসূত্রের ওপর বিশ্বাসহীনতা, রাজনৈতিক মেরুকরণের মতো বিষয়গুলো অনেকখানি বৃদ্ধিতে একসাথে কাজ করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপফেক। দীর্ঘমেয়াদে বিষয়গুলো নাগরিকদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অধিকারহীনতার দিকে ধাবিত করতে পারে।'
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আলাদীনের জিনির সঙ্গে তুলনা করছেন অনেক গবেষক। যা বোতল থেকে বের হয়ে ক্রমেই পরিশীলিত হয়ে উঠছে। গবেষকদের ধারণা, এ আই আসলেই গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে কী না তা বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন ও নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ও প্রবিধান বিভাগের অধ্যাপক স্যান্ড্রা ওয়াচার বলেন, 'আপনার কাছে এমন কিছু তথ্য আছে যা বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে। কিন্তু আপনি জানবেনও না যে বড় ধাক্কা খেতে চলছেন। নির্বাচনে এআই ও ডিপফেকের হস্তক্ষেপ করার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।'
তবে আগামী দশকে সাইবার সিকিউরিটি ও প্রযুক্তির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এ বিষয়ে একমত গবেষকেরা।