যুদ্ধ , ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

যুদ্ধক্ষেত্রে এফ সিক্সটিন ফাইটার জেট ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেন

কিছুদিনের মধ্যেই ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবে এফ সিক্সটিন ফাইটার জেট। বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস আর নরওয়ে ইউক্রেনকে ৮০টি এফ সিক্সটিন যুদ্ধবিমান দিতে যাচ্ছে। মাসের পর মাস এই যুদ্ধবিমান নিয়ে অপেক্ষা ইউক্রেনের। কিয়েভ বলছে, এই ফাইটার জেট বদলে দেবে যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্যপট।

খুব শিগগিরই ইউক্রনের আকাশে উড়বে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ সিক্সটিন যুদ্ধবিমান। এরমধ্যে রাশিয়ার জ্বালানি ক্ষেত্র খননে প্রয়োজনীয় যন্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফোর্স ঘোষণা দিয়েছে, ইউক্রেনরে এই বিমান রাশিয়ার যে সেনা প্রথমে ভূপাতিত করবে, তাকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে দেড় কোটি রুবল বা ১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। পাশাপাশি এই এফ সিক্সটিন ধ্বংসে সুপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টি নামাবে রাশিয়া। যে কারণে কিছু বিমান পোল্যান্ডে রাখার পরিকল্পনা করছে কিয়েভ।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, যতো হুমকি দেয়া হোক, এই বিমান ইউক্রেন ব্যবহার করবে আবার রক্ষাও করবে। প্রথম বহর ইউক্রেনে আসবে কয়েকে সপ্তাহেই। যে কারণে বৈমানিকদের দেয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ। এক ইঞ্জিনের এই বিমানকে যুদ্ধরত বাজপাখি বা ভাইপারও বলা হয়। অগণিত হলিউড সিনেমা আর ভিডিওগেমে এই বিমান দেখানো হয়েছে।

১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম আকাশে উড়ে এফ সিক্সটিন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর এই বিমান আরও উন্নত করা হয়। এরপরও সোভিয়েত ইউনিয়নের মিগস ভারি আর ধীরগতির ফাইটার জেটগুলোকে সহজেই কাবু করে ফেলে। কিন্তু সংস্করণের পর এখন লকহেড মার্টিনের তৈরি এফ সিক্সটিন বিশ্বে সবচেয়ে বেশ ব্যবহৃত ফাইটার জেট। এরপরও সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫০ বছরের বিবর্তনের পর নতুন প্রজন্মের এফ সিক্সটিনও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে গেম চেঞ্জার হবে না।

ইউক্রেনের সাবেক সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিমান মোটেও রুশদের জন্য ভয় পাওয়ার নয়। কারণ বিমানের গঠন অনুযায়ী, কখনও এটি বিপজ্জনক, তাছাড়া এই বিমানে যেই পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হবে, সেগুলো পশ্চিমাদের দেয়া। তবে এফ সিক্সটিন অনেক ক্ষেপণাস্ত্র আর বোমা বহন করতে সক্ষম। এই যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১২০ কিলোমিটার, যেখানে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র যেতে পারে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।

বিমানগুলো পরিচালনায় বৈমানিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে মাত্র ৬ মাস। তবে এতো কম সময়ে বিমান উড়ানো, শত্রুপক্ষকে কাবু করা কঠিন। পাশাপাশি এই বিমানগুলোকে ধ্বংস করতে রাশিয়া যে বিমান বানিয়েছে, সেগুলোর বিষয়েও বিস্তারিত জানা প্রয়োজন ইউক্রেনের বৈমানিকদের। দেশটির সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত নয়। যুদ্ধক্ষেত্রে এই এফ সিক্সটিনের সফলতা নিয়ে সন্দিহান তারা। তবু রাশিয়ার ৩০০ বিমানকে টেক্কা দিতে ১২০টির বেশি যুদ্ধবিমান চেয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়, দশকের পর দশক ধরে অবহেলিত ইউক্রেনের বিমানখাত। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কিয়েভ তাদের সোভিয়েত আমলের বিমান মস্কোকে দিয়ে দেয়। রাশিয়ার 'সিক্সটিন তু ওয়ান সিক্স জিরো' যুদ্ধবিমান, যেগুলো কোন একসময় কিয়েভেন ছিলো, সেগুলো বহন করতে পারে ৪৫ টন বোমা আর ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র, এই বিমানগুলো ১৯৯০ সালে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে রাশিয়াকে হস্তান্তর করে কিয়েভ।

ইউক্রেনের সবচেয়ে নতুন বিমান 'সু টু সেভেন'ও ১৯৯১ সালে তৈরি। বাকি বিমানগুলো বৈমানিকদের মতোই বয়স্ক। কিয়েভের ৫০টি 'মিগস টু নাইন' ও দুই ডজন 'সুখোই টু সেভেন' ফাইটার জেট আছে। যেগুলো খুব সহজে রাডারে ধরা পড়ে যায় আর জ্যাম করা সম্ভব।

অন্যদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে মস্কো ব্যবহার করছে আধুনিক মিগস আর সুখোই। ইউক্রেন ডজনখানেক বিমান ধ্বংস করেছে রাশিয়ার। কিন্তু কিয়েভ হারিয়েছে ২২টি মিগস। ফ্রান্স আর সুইডেন আরও আধুনিক যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দিতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র চাপিয়ে দিয়েছে এফ সিক্সটিন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটাও যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনীতির অংশ।