দেশে এখন

চাঁদপুরে জৌলুস হারাতে বসেছে ইলিশ

ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুরে জৌলুস হারাতে বসেছে ইলিশ। প্রতিবছর সরকারি খাতায় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও জেলেরা বলছেন, আগের মত ইলিশ উঠছে না জালে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা হয়ে পড়ছে ইলিশ শূন্য। ইলিশের চাহিদা আর জোগানের বিপরীতে দাম ছুঁয়েছে আকাশ।

কড়াইয়ের ফুটন্ত তেলে ভাজা হচ্ছে রূপালী ইলিশ। সাথে গরম ভাত, পেঁয়াজ ও শুকনো মরিচ ভাজা। এমন লোভনীয় খাবার উপেক্ষা করে সাধ্য কার। আর ইলিশ যদি হয় চাঁদপুরের তাহলে তো সোনায় সোহাগা।

ভাতের হোটেলের মালিক মো. শাহজাহান। ৫০ বছর যাবত ব্যবসা করছেন চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছঘাট এলাকায়। দুই দশক আগেও বড় সাইজের ভাজা ইলিশের ১ টুকরো বিক্রি করতেন ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এখন তা খেতে গেলে গুনতে হয় ৩শ' থেকে সাড়ে ৩শ' টাকা। একই দামে আগে কেনা যেত আস্ত একটি ইলিশ মাছ।

মো. শাজাহান বলেন, 'আগে একটা মাছই ৩শ’ টাকায় পাওয়া যেত এখন এক পিছ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ টাকা। মাছের দাম অনেক বেশি।'

চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা গ্রামের বাসিন্দা আবুল খায়ের রাঢ়ী। ষাটোর্ধ্ব এই জেলে সংসারের হাল ধরতে মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার সাথে নদীতে নামেন মাছ শিকারে। প্রায় ৫০ বছরের জেলে জীবনে খুব কাছ থেকে দেখেছেন নদীর চিত্র। এক সময় খরস্রোতা পদ্মা-মেঘনা যেন আজ মৃত প্রায়।

আবুল খায়ের রাঢ়ী বলেন, 'মাছই নেই নদীতে। দুইটা মাছ ১০ হাজার টাকা বিক্রি লাভ কি?'

ভাটি অঞ্চলে অতিরিক্ত জাল ফেলা, জাটকা নিধন, দূষণ আর অসংখ্য ডুবোচরসহ নানা কারণে ক্রমেই কমে যাচ্ছে নদীর মাছ। এতে জেলেদের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ।

ইলিশ কম ধরা পড়ার প্রভাব পড়ছে বাজারে। সরকারের খাতায় প্রতিবছর ইলিশের উৎপাদন উর্ধ্বমুখী হলেও দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সমানতালে। চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে ২০১১ সালেও ১ কেজি ওজনের একটি ইলিশ কেনা যেত ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। একই ওজনের একটি মাছ কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ' টাকা।

দেশের অন্যতম বড় ইলিশের পাইকারি বাজার বড় স্টেশন মাছঘাটে একটা সময় মৌসুমে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার মণ ইলিশ বেচাকেনা হতো। কিন্তু বর্তমানে মাছঘাটে ইলিশের সেই জৌলুস আর নেই। মাছের সরবরাহ আশঙ্কাজনক ভাবে কমায় লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন আড়তদাররা।

আড়তদারদের একজন বলেন, 'আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই অনুপাতে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না।'

আরেকজন বলেন, 'একটা মাছ ২ হাজার ১৫শ’ টাকা দিয়ে কিনে খাওয়া সবার পক্ষে সম্ভব না।'

মৎস্য কর্মকর্তা ও গবেষকরা বলছেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দিন দিন চাহিদাও বাড়ছে। চাঁদপুরের নদীতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করা হচ্ছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, 'তারা টোটাল কষ্টের উপর নির্ভর করে মাছের দামটা নেয়ার চেষ্টা করে।'

ইলিশের প্রাচুর্য রক্ষায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর