পরিবেশ ও জলবায়ু
দেশে এখন

২০ বছরে ৯ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে সিলেট

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সুনাম ম্লান করে সিলেট এখন বন্যাপীড়িত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। গত ২০ বছরে ছোটবড় ৯টি বন্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষকে। এতে পুরো অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো ভেঙে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সময় থাকতেই তাই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার তাগিদ পরিবেশবিদদের।

বন্যা এখন সিলেটের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। বিগত ২ দশকে বন্যার কাছে বার বার বিপর্যস্ত হতে হয়েছে পুরো সিলেট অঞ্চলকেই। বছরের এমন সময় দেশের অন্যান্য অঞ্চল যখন তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ে তখন সিলেট ভাসে বানের জলে।

২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি সিলেটের মানুষ। একটি বিপর্যয়ের দাগ মুছতে না মুছতেই আরেকটি ধাক্কা, আকস্মিক বন্যা। ২০২২ পুরো সিলেট ডুবে গেলেও চলতি বন্যা শুধু মাত্র সিলেট জেলার ৫টি উপজেলাকে লন্ডভন্ড করেছে খুব সময়েই। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে পুরাতন বন্যার তীব্রতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে নতুনটি।

সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, '২০২২ এর বন্যার চেয়ে এবারে বন্যার পানির উচ্চতা ভয়াবহ ছিল। ২০২২ এর বন্যার চেয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে আধা মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।'

বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষ । সিলেট যে সকল সম্পদের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে তার সবই বিলীন হয় বন্যার আগ্রাসনে।

দ্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, 'কৃষি, মৎস্য ও পর্যটক এই খাতগুলো প্রতিবছরই ধ্বংস করে দিচ্ছে বন্যা। আমাদের প্রতিটা মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত শুধু ব্যবসায়ীরা না। আর এই ক্ষতির চাপ অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলবে।'

পরিসংখ্যান বলছে ১৯৮৮ সালের পরবর্তী বন্যা ছিল ২০০৪ সালে । তারপর ধারাবাহিক ভাবে এই ২০ বছরের মধ্যে ২০১০, ১৭, ২০ এবং ২২ সালের বন্যা সহ ছোট বড় ৯টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে হয়েছে সিলেটকে। বিশ্লেষকরা বলছেন সামাজিক সূচকের সকল কাঠামোকে প্রতিনিয়তই ক্ষত বিক্ষত করছে এই বন্যা ।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি তত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, 'সবগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। লোকাল ও ইন্টারন্যাশনাল প্রযুক্তিসহ লোকাল পিপলস সমন্বয়ে করে মোকাবেলা করতে হবে।'

প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর শিল্পায়নের খেসারত দিতে হচ্ছে প্রকৃতি কন্যা এই সিলেটকে। প্রাকৃতিক জলাধার, পুকুর , খাল বা নদী ধ্বংসই এর জন্য অন্যতম দায়ী ।

জার্মান পোর্টস দ্য মিনিস্ট্রি ট্রুথ ফর ক্লাইমেট রিসার্চের পরিবেশ বিজ্ঞানী মফিজুর রহমান বলেন, 'আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে মানে পানি নিশ্চিত না করতে পারি তাহলে আমি মনে করি না খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কথা বলি তা অনেকদিন ধরে রাখতে পারবো।'

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে সিলেটে বন্যার প্রকোপ আরও বাড়বে তাই সময় থাকতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের গবেষণা ভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই ।

অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, 'টোটাল কৃষি ব্যবস্থা ও লাইফ সিস্টেমকে প্রভাব ফেলছে। শুধু পশু-পাখি, গাছপালা তা কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও ফেলছে।'

সিলেট অঞ্চলে নদী খনন এবং বাঁধ নির্মাণের নামে ব্যাপকভাবে অর্থ ব্যয় হলেও তেমন কোনো দৃশ্যমান ফলাফল নজরে আসায় সরকারের টেকসই বন্যা ব্যবস্থাপনার আরও অধিক মনোযোগ দেওয়া জরুরি বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের ।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর