পরিবেশ ও জলবায়ু

তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মরে যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রবাল

জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রাভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ায় মরে সাদা হয়ে যাচ্ছে সমুদ্রে থাকা নানা রঙের প্রবাল প্রাচীর। এতে আবাসস্থল হারিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। যার কারণে হুমকিতে পড়ছে সমুদ্র থেকে মৎস্যসম্পদ আহরণ করা মানুষের জীবন-জীবিকায়। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডের চান্থাবুরি প্রদেশের মৎস্যজীবীদের আয়ে লেগেছে ভাটার টান।

সমুদ্রের নিচে এক বিস্ময়কর জগৎ! যেখানে সৌন্দর্যের পাশাপাশি জলজ বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে হরেক রঙের বৈচিত্র্যময় প্রবাল প্রাচীর। যা সামুদ্রিক জীব থেকে শুরু করে লাখো মানুষের খাদ্য এবং জীবিকার উৎস। এমনকি সমুদ্রের দুর্যোগপূর্ণ ঢেউ এবং বন্যার ক্ষতি থেকে উপকূলকে রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে এই প্রবাল প্রাচীর।

জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদানটি আজ বিপন্ন। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ধীরে ধীরে প্রাণ হারিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমুদ্রে থাকা হরেক রঙের প্রবাল প্রাচীর। যা থেকে রেহাই পায়নি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চান্থাবুরি প্রদেশের সমুদ্রে থাকা প্রবালগুলো।

সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ললিতা পুটচিম বলেন, আমি একটিও সুস্থ প্রবাল খুঁজে পাইনি। এই মুহূর্তে বেশিরভাগ প্রবাল প্রচীরাই ফ্যাকাশে রঙে পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম বড় কারণ হলো সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি। আমি যখন সমুদ্রের পানিতে নামলাম, তখনই আমি অনুভব করলাম যে পানি অনেক গরম। পরে যখন ডাইভ কম্পিউটার চেক করলাম, তখন দেখা গেল সমুদ্রের নিচে পানির তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা অস্বাভাবিক।'

মৎস্যজীবীরা বলেন, একটা সময় আপনি প্রবাল প্রাচীর সহজেই মাছ ধরা যেতো। যা জীবিকা অর্জনের এক চমৎকার উৎস ছিল। প্রতিদিন অন্তত ২৭০ ডলারের বেশি অর্থ উপার্যন করা যেতো। এখন ৫৫-৮৩ ডলারের বেশি উপার্জন করা সম্ভব হয় না। যদি সব প্রবাল মারা যায়, এখানকার সব জলজ প্রাণী অন্যত্র চলে যাবে। আমাদের জীবিকাও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

এভাবে চলতে থাকলে একসময় সমুদ্র থেকে পাওয়া মৎস্যজাত পণ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যার কারণে বিশ্বে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে সামুদ্রিক খাদ্য পণ্যের বাজার।

থাইল্যান্ড উপসাগরের ৫০ শতাংশ এবং আন্দামান সাগরের ৩০ শতাংশ প্রবাল পুরোপুরি নষ্টের পথে। এসবের জন্য জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াও সমুদ্র ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য ও ময়লাকেও অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছে থাই কর্তৃপক্ষ। তাই মানবসৃষ্ট সমুদ্রিক পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে চলতি মাসে ১২টি সামুদ্রিক উদ্যান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় থ্যাইল্যান্ড।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর