দেশে এখন
পরিবেশ ও জলবায়ু

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ১০ জনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামসহ ছয় জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যার আগেই প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাগ প্রবেশ করে বাংলাদেশ উপকূলে। শুরু হয় বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়া। পূর্বাভাস অনুযায়ী শুরুতে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় আঘাত হানে রিমালের অগ্রভাগ। এরপর রাত সাড়ে আটটার দিকে রিমালের কেন্দ্র আঘাত হানতে শুরু করে।

উপকূলসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় তাণ্ডব চালায় রিমাল। ঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও কক্সবাজার জেলা। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েন বেশ কয়েকটি এলাকার হাজার হাজার মানুষ। গাছপড়ে বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি। বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ। ঘটে প্রাণহানি। তাৎক্ষণিক বিচ্ছিন্ন হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। ভুতুড়ে পরিবেশে রূপ নেয় জনপদ।

আশ্রয়কেন্দ্রে উৎকন্ঠায় সময় কাটছে উপকূলবাসীর। ছবি: এখন টিভি

স্থানীয়রা বলেন, পানি আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হইতেছে। খেয়াঘাট ও নিচু অঞ্চল পানির নিচে। আমরা সবাই স্কুলে আশ্রয় নিছি। সকাল সকাল থেকে বাচ্চাদের কিছু খাওয়াইতে পারি নাই। এখানে শুকনা খাবারের ব্যবস্থা নাই। খাবার দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দেয় নাই। এখানের পরিস্থিতি খুব খারাপ।

আবহাওয়া অফিসের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বে রিমাল। পটুয়াখালীতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। এর প্রভাবে মঙ্গলবার (২৮ মে) পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমাল পূর্ণ শক্তি নিয়েই উপকূল অতিক্রম করছে। বজ্র বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার কারণে সকাল পর্যন্ত তার দাপট অব্যাহত থাকবে।'

গবাদি পশুকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। ছবি: এখন টিভি

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে উপকূলীয় ১৯ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৮ লাখ মানুষের জন্য রাখা হয়েছে খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা।

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিস আমরা পৌঁছে দিয়েছি। বাড়তি চাহিদা অনুযায়ী সামগ্রী পৌঁছে দিতে আমাদের দুযোর্গ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।'

দুর্যোগ থেকে রক্ষায় মাঠে কাজ করে কোস্টগার্ড, রেড ক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। হতাহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। সড়ক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেন তারা।

এর আগে রোববার সকাল থেকে উপকূলে শুরু হয় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব। বৃষ্টি ও দমকা হওয়ায় বাড়ে আতঙ্ক। ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সতর্কবার্তায় দেশের ৪ সমুদ্রবন্দরে অ্যালার্ট ফোর জারি করা হয়। বন্ধ রাখা হয় কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরের ফ্লাইট ওঠানামা। অভ্যন্তরীণ সকল রুটে নৌযান চলাচলেও দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর