দেশে এখন , সাহিত্য
সংস্কৃতি ও বিনোদন

নজরুলের অসাম্প্রদায়িক ভাবনা ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান

প্রেম ও বিদ্রোহের কবি হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর গানের চরণের মতোই বাংলা ভাষাভাষীর হৃদয়ে বেঁচে আছেন, থাকবেন। ২০০৬ সালে তার বর্ণাঢ্য কৈশোরকে আগলে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠা করা হয় তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়। গড়ে উঠেছে নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র ও জাদুঘর। গবেষকরা বলছেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান কবিতার পাশাপাশি তার অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা ছড়িয়ে দিতে হবে নতুন প্রজন্মের কাছে।

কবি নজরুলের শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাজীর সিমলার বাড়ির উঠানে। দারোগাবাড়ির পুকুর পাড়ে। আর সেই ঘাটই এখন নিস্তব্ধ শুনশান। এই শূন্যতায় কালের সাক্ষী হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা বকুল গাছ থেকে ঝড়ে পড়ছে ফুল।

বাবার কাছে শোনা কবির দুরন্ত শৈশব, বন্ধুদের সাথে বাঁশি বাজানো সবই স্মৃতিতে ঝলমল করে কাজী পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কাজী আব্দুল কাসেমের স্মৃতিতে।

কাজীর শিমলার দারোগাবাড়ি। ছবি: এখন টিভি

রফিজউল্লাহ দারোগার নাতী কাজী মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, 'পুকুর পাড়ে থাকতো, পুকুর পাড়ে তাল গাছ ছিল সেই তাল কুড়াতো, মাছ ধরতো, বাঁশি বাজাইতো, গান গাইতো। 

ত্রিশালের কাজীর শিমলার দারোগাবাড়ির পুকুর পাড়। ছবি: এখন টিভি

১৯১৪ সালের কথা। ভারতের আসানসোলের চায়ের দোকান থেকে দারোগা রফিজউল্লাহ কিশোর নজরুলকে এনেছিলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজীর শিমলা গ্রামের নিজের বাড়িতে। পরে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল ত্রিশালের নামাপাড়া গ্রামে বিচুতিয়া ব্যাপারীর বাড়িতে।

ত্রিশালে প্রায় বছরখানেক বসবাস করা এই দুই বাড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র, যা মানুষের পদচারণায় বরাবরই থাকে মুখর।

নজরুল গবেষক ও শিক্ষক স্বপন ধর বলেন, 'এতো প্রতিভাবান ছিল যে সে ইমামতি থেকে শুরু করে কোনো কাজে ব্যর্থ হয় নাই।'

সোনার চামচ মুখে কজন জন্মায়? কেউ আজন্ম দুঃখ সাথী করে বেঁচে থাকেন খড়কুটো আঁকড়ে। চরম দারিদ্র্যকে সঙ্গে নিয়ে পীর পুকুরের এক মাটির ঘরে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে, বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ তারিখে এক সুদর্শন ফুটফুটে শিশু জন্মায়। সেদিন ছিল প্রচন্ড- ঝড়ের রাত, রাতেই জন্ম তার। নাম তার দুখু মিয়া, কখনও নজর আলী।

তার বর্ণাঢ্য কৈশোরকে আগলে ২০০৬ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠা করা হয় তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কবির প্রতি ভালোবাসায় যা পরিণত হয়েছে নজরুলতীর্থে।

হাজার বছরের বাংলা নাট্যের সঙ্গীতময়তাকে কবি নজরুল আধুনিককালের প্রেক্ষাপটে দাঁড় করাতে পেরেছিলেন। তাঁর রচিত নাটকের ভাষা, গীত ও কাব্যের যুগলবন্দিতে আবৃত। তবে, বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে নজরুল নাট্যচর্চা হচ্ছে না বলে মনে করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, 'আমরা যে নাটকগুলো সামনে পাই এর বাহিরেও বেশ কিছু নাটক রয়েছে যার চর্চার প্রয়োজন ব্যাপকহারে প্রচার ও প্রসার করানো দরকার বলে মনে করি।' 

কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, 'বাংলাদেশে কাজী নজরুলের নাট্যচর্চা আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি হয়ে থাকে এবং এর বাহিরে যদি বলি খুব একটা চোখে পড়ে না।'

শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, 'নজরুলের নাটক করতে আমাদের ভালো লাগে মনে হয় নিজেদের।' 

সীমিত কর্মজীবনে প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। পৃথিবীর কোনো ভাষায় একক হাতে এতো বেশি গান রচনার উদাহরণ আছে কি?

শিক্ষার্থীদের আরেকজন বলেন, 'আমাদের সবধরনের গানেই নজরুলের ছোঁয়া আছে। গজল থেকে শুরু করে আধুনিক যেকোনো গানেই তার হাত রয়েছে।'

নতুন প্রজন্ম যেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান, তার বহুমুখী প্রতিভার সম্পর্কে যেন জানতে পারে তা জানান দেয়ার সময় এসেছে। তাই জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে নজরুল সংগীতকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি দেশ বরেণ্য শিল্পীদের।

ঢাকা ট্রাস্টি বোর্ড কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের বরেণ্য নজরুল সংগীত শিল্পী ও চেয়ারম্যান খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, 'তার অসম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের মধ্যে আবার জাগিয়ে তুলতে হবে। সেই জায়গাতে কাজী নজরুল ইসলাম দর্শনের জায়গাতে বিশাল একটি স্থান রয়েছে।'

প্রেম ও বিদ্রোহের কবি হয়ে তিনি তাঁর গানের চরণের মতোই বাংলা ভাষাভাষীর হৃদয়ে বেঁচে আছেন, থাকবেন। বেঁচে থাকেবেন তার বহুমাত্রিক ঔজ্জ্বল্যে, তার চিন্তায় দর্শনে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর