এশিয়া
বিদেশে এখন
0

মোদির দাপট কমাতে পারবে কি গান্ধী পরিবার!

মোদির দাপটে কি শেষ পর্যন্ত অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে গান্ধী পরিবার? ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে বড় প্রশ্ন। ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে পারিবারিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা গান্ধী পরিবার কয়েক দশকে নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছে। কিন্তু আমেথি আর রায় বেরিলি আসনের ভোটাররা দীর্ঘ সময় পাশে ছিল গান্ধীদের। সোমবারের (২০ মে) ভোটে আসন দু'টিতে আবারও পরীক্ষার মুখে গান্ধী পরিবার, যার ফল নির্ধারণ করবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক অস্তিত্ব।

২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতা হারানোর পর রায় বেরিলি থেকে আমেথির রাস্তায় দেখা মেলেনা সেই পুরোনো ব্যস্ততার। ভারতের জন্মলগ্ন থেকে যে দু'টি শহর আর সেখানকার রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে কংগ্রেসের নেতৃত্বে থাকা গান্ধী পরিবারের নাম।

১৯৪৭ সাল থেকে প্রায় অর্ধেক সময় ভারতে ক্ষমতায় ছিল গান্ধী পরিবার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করেছেন তিন প্রজন্ম। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, এরপর তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধী এবং নাতি রাজীব গান্ধী। প্রায় সাড়ে সাত দশকের রাজনীতিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, সকল চড়াই-উৎরাইয়ে গান্ধীদের প্রতি সমর্থন অটল ছিল ৬২ কিলোমিটার ব্যবধানে অবস্থিত দুই শহর আমেথি ও রায় বেরিলির ভোটারদের। ভারতের শতবর্ষী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সুরক্ষিত দুর্গ ছিল উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশের এই দু'টি আসন।

কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে নাটকীয় বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কংগ্রেস। যখন আমেথির দুর্গে হানা দেয় ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতাসীন বিজেপি। রাজীব গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধীকে ৫৫ হাজার ভোটে হারিয়ে দেন বিতর্কিত স্মৃতি ইরানি। রাহুল গান্ধীর মা সাবেক কংগ্রেস প্রধান সোনিয়া গান্ধী রায় বেরিলিতে জয়ী হয়ে রাজ্যে কংগ্রেসের একমাত্র আসন হিসেবে দলের ভিত কোনোরকমে টিকিয়েছেন সেবার। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ আসনের ৮০টিই উত্তর প্রদেশের। এ রাজ্যসহ ৩০৩ আসনে জিতে দেশজুড়ে ছেয়ে যায় বিজেপি।

স্থানীয় একজন বলেন, 'বিজেপি আবার আসবে কারণ বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে, ঋণ দিচ্ছে। অযোধ্যা মন্দির বানিয়েছে। সব জায়গায় গঙ্গার ঘাট তৈরি করে দিয়েছে।'

পাঁচ বছর পর ফের ক্ষমতাসীন বিজেপি আর প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের যুদ্ধক্ষেত্র আমেথি ও রায় বেরিলি। এবার রায় বেরিলিতে ৭৭ বছর বয়সী সোনিয়ার আসনে ভোটে দাঁড়িয়েছেন ছেলে রাহুল। আমেথি থেকে পুনঃনির্বাচন করছেন স্মৃতি ইরানি, বিপরীতে গান্ধী পরিবার। দুই প্রার্থীই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এ পরীক্ষা শুধু দুই আসনের নয়। আমেথির আসন ধরে রেখে রায় বেরিলিতেও যদি এবার জেতে বিজেপি, উত্তর প্রদেশ থেকে আক্ষরিক অর্থেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবার। উল্টোদিকে দুই আসনেই বিরোধী দল কংগ্রেস জয়ী হলে রাজ্যে বিজেপি বিরোধীদের উত্থান দেখা যেতে পারে। আর ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে উত্তর প্রদেশে জয়ী দলকেই বেশিরভাগ সময় দেখা গেছে কেন্দ্রের ক্ষমতায়।

স্থানীয় একজন বলেন, 'রায় বেরিলিতে কংগ্রেসকে ছাড়া জেতার মতো কারো জন্ম হয়নি আজও। রায় বেরিলির জন্য আজ পর্যন্ত যতো কাজ হয়েছে, সব কংগ্রেসই করেছে। কংগ্রেস ছাড়া আর কোনো দল করেনি। ১০ বছর ধরে তো বিজেপি ক্ষমতায় আছে। কী করেছে ওরা, একটা কাজ বলুন?'

ভোট সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও প্রকাশ করছে কংগ্রেস, যেখানে রাহুল ও সোনিয়া আমেথি ও রায় বেরিলির সঙ্গে পারিবারিক সংযোগ তুলে ধরতে প্রকাশ করেছেন পুরোনো অনেক স্মৃতি। গান্ধী পরিবারের সঙ্গে কয়েক দশকের সম্পর্কে ১৯৫২ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ইন্দিরার স্বামী ফিরোজ গান্ধীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন রায় বেরিলির ভোটাররা। পরবর্তীতে এ আসনে জেতেন ইন্দিরা ও সোনিয়া।

রায় বেরিলিতে কেবল তিনবার হেরেছে কংগ্রেস। ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা সরকারকে হারিয়ে জাতীয় বিরোধী জোট ক্ষমতায় আসার পর এবং এরপর ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালে জাতীয় পর্যায়ে বিজেপির উত্থান শুরু ও প্রথম ক্ষমতাগ্রহণের পর। তবে গান্ধী পরিবারের কোনো সদস্য এ আসনে ভোটে দাঁড়াননি ওই তিন নির্বাচনের একটিতেও।

এসএস