প্রায় ১৫ একর জমির ওপর ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজধানীর শাহবাগ শিশুপার্ক। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে শিশুপার্কটি বন্ধ ঘোষণা করে।
তৃতীয় পর্যায়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এই শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য বন্ধ রাখা হয়। নোটিশে জানানো হয়, সার্বিক বিষয় ও দুর্ঘটনা থেকে নাগরিকদের রক্ষায় রাখতে সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয় কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক।
শিশুপার্কের স্থানের মাঝামাঝি ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিং, জলাধারা, আন্ডারপাস, হাঁটার পথ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই কাজ শেষে শিশুপার্কের স্থান ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার পরই কাজ শুরু করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ঢাকা শিশু পার্কের উন্নয়ন কাজ চলছে। ছবি: এখন টিভি
পার্কটির আধুনিকায়নে প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা একনেক থেকে অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ৪৮৩ কোটি টাকা দেবে সরকার। এই টাকার ৫০ ভাগ অনুদান এবং ৫০ ভাগ ঋণ হিসেবে দেয়া হচ্ছে। বাকি ১২০ কোটি টাকা দক্ষিণ সিটির তহবিল থেকে খরচ করা হবে। অনুমোদিত প্রকল্পের ৪১৫ কোটি টাকা খরচ হবে ১৫টি অত্যাধুনিক রাইড কেনা ও স্থাপনে।
কবে শিশুপার্কের কাজ শেষ হবে? এমন প্রশ্নে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের উত্তর ছিলো, সেই দিন তারিখ জানেন না কেউই। তবে দুই বছরের মধ্যেই সকল রাইড বসানো শেষ হবে বলে আশাবাদী ডিএসসিসি মেয়র।
তিনি বলেন, 'আমরা এখন দরপত্রে চলে গিয়েছি। কিছু অংশে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু পুরো শিশুপার্কসহ ওখানে কয়েকটি প্রকল্প হচ্ছে। শিশুপার্কটা আমাদের দক্ষিণ সিটির অংশে। এর সাথে অন্য অংশে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আগামী বছরের মধ্যে শিশুপার্কে রাইড লাগানো হয়ে যাবে। তবে বাকি যে কাজগুলো চলছে তা শেষ না হলে আমরা চালু করতে পারবো না কি এটা নিয়ে সংশয় রয়েছে।'
শিশু পার্কের পত্যিাক্ত একটি রাইড। ছবি: এখন টিভি
পরিকল্পনা না করেই তড়িঘড়ি করে শিশুপার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান মেয়র। একটি পুরো প্রজন্ম বঞ্চিত হচ্ছে শুধুমাত্র সমন্বয়হীনতার কারণে এমনটাও স্বীকার করে নিলেন তিনি।
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, 'প্রথমে যখন এটা নিয়ে পরিকল্পনা করা হলো তখন আসলে তড়িঘড়ি করেই শিশুপার্কটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা আসলে পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করে ঠিকাদার নিয়োগ হয়ে গেলে বন্ধ করে দেয়া যেত।'
শিশুদের জন্য এই নগরে খুব স্থানই আছে। সেখানে ৫ বছর ধরে শিশুপার্কটি বন্ধ থাকায় ক্ষতি হচ্ছে । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুপার্ক নতুন করে উন্নয়ণে প্রাধাণ্য দিতে হবে গাছ-পালা ও প্রকৃতিকে।
পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম বলেন, 'যেহেতু আমাদের পার্কের সংখ্যাই অনেক কম, যেগুলো আছে সেগুলোতে প্রবেশগম্যতা খুবই জরুরি। এটা উন্নয়ন কাজের জন্য বা নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার জন্য প্রবেশগম্যতা না থাকলে পার্ক থেকে কোনো লাভ নেই। যেহেতু আমরা এটা পার্ক বলছি, অবশ্যই খোলা জায়গা, মাঠ, গাছ বেশি থাকবে।'
পার্কটির আধুনিকায়নে ১৫টি রাইড যুক্ত করার কথা রয়েছে। এতে থাকবে, সুপার এয়ার রেস, টি কাপ-৯, ফ্লাইং ক্যাসেল, মিনি কোস্টার, বাম্পার কার, ম্যাজিক বাইক, সুপার হ্যাপি সুইং, মেরি-গো-রাউন্ড ও ওয়াটার মেনিয়া।