দুপুরের পর থেকেই বন্দরে নাবিকদের স্বজনদের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ঠিক এই মুহূর্তটির জন্য টানা দুই মাস ধরে দিন গুণছিলেন নাবিক ও তাদের স্বজনরা। যার অবসান ঘটলো আজ।
জিম্মিমুক্ত নাবিকদের অভ্যর্থনায় আগে থেকেই সেখানে নেয়া হয় সব ধরনের প্রস্তুতি। নাবিকদের চোখে-মুখে ছিল প্রশান্তির ছাপ ও হাস্যোজ্জ্বল। করতালির মাধ্যমে তাদের বরণ করে নেন জাহাজটির মালিকপক্ষ ও স্বজনরা।
বন্দর জেটিতে জাহাজ ভেড়ার পর একে একে নেমে আসেন জীবন ঝুঁকিতে থাকা এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক। এ সময় আপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। স্বজনদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জেটিতে উপস্থিত মালিকপক্ষের কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নাবিকদের।
![](https://images.ekhon.tv/CTG NABIK 3.webp)
জাহাজ থেকে নেমেই নাবিকদের কেউ কেউ উচ্ছ্বাস নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান সাংবাদিকদের কাছে। একজন নাবিক বলেন, ‘আমরা খুব খুশি। আমরা ফিরতে পেরেছি। খুবই ভালো লাগছে।’
আরেকজন নাবিক বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা সবাই সুস্থভাবে দেশে ফিরেছি। ৩৩ দিন আমাদের যেভাবে কেটেছে তা বর্ণনা করে শেষ করতে পারবো না। সবাইকে ধন্যবাদ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। কৃতজ্ঞতা সবার প্রতি।’
এর আগে সকাল ১১টার দিকে ২৩ নাবিক নিয়ে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় জাহান মনি। সকালে মালিকপক্ষ কেএসআরএম সূত্রে এ তথ্য জানায়।
![](https://images.ekhon.tv/CTG NABIK 2.webp)
সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদশা থেকে মুক্তির দুই মাস পর গতকাল বিকেলে দেশে ফেরে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক। এদিন কুতুবদিয়ায় নোঙর করে জাহাজটি।
সোমবার (১৩ মে) বিকেল ৪টায় বিকল্প দল বা রিপ্লেসমেন্ট টিমের নতুন ২৩ নাবিককে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কুতুবদিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এমভি জাহান মনি-৩ নামে একটি লাইটারেজ জাহাজ। এসআর শিপিংয়ের এই জাহাজটি চট্টগ্রাম সদরঘাটের কেএসআরএম জেটি থেকে যাত্রা করে। ৭ থেকে ৮ হাজার টন চুনাপাথর খালাস করে ড্রাফট কমিয়ে এটি বাকী পাথর খালাস করবে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে। আর নতুন নাবিকরা রিপ্লেসমেন্ট হওয়ার পরই আগের নাবিকরা চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়।
![](https://images.ekhon.tv/CTG NABIK-1.webp)
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালিয়া উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। অস্ত্রের মুখে জাহাজ ও এর ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। এর ৩৩ দিন পর মুক্তিপণ নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল জলদস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে চলে যায়। এরপর আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি।
২৩ নাবিকসহ জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছে গত ২১ এপ্রিল। পরদিন ২২ এপ্রিল রাতে জেটিতে নোঙর করে। এরপর শুরু হয় কয়লা খালাসের প্রক্রিয়া।
গত ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ চট্টগ্রামের উদ্দেশে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমুদ্রসীমা ত্যাগ করে।