কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
অর্থনীতি
0

ভুট্টায় ভাগ্য পরিবর্তনের আশা পদ্মার চরবাসীর

এক সময় পদ্মা নদীর ফরিদপুরের চরাঞ্চলকে ভাবা হতো অনুর্বর। হতো না তেমন কোনো ফসল, তাই শত শত একর জমি পড়ে থাকতো অনাবাদি। বছরের কয়েক মাস পানি থেকে জেগে থাকার পর এই চরের জমিগুলো ফের নিমজ্জিত হয় পদ্মার পানিতে। তাই ওই সময়ে এসব জমিন জুড়ে জন্ম নিতো আগাছা আর ঘাসপাতা।

চরবাসী জানান, চরের মানুষের জীবিকা পশু পালন। প্রকৃতিগতভাবে জন্ম নেয়া আগাছা আর ঘাসের উপর ভর করেই পশু পালনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন তারা। তবে বেশ কিছু বছর আগে পশুর খাবারের চাহিদা মেটাতে কেউ কেউ ভুট্টার চাষাবাদ শুরু করেন। দেড় যুগ আগেও তারা ভুট্টার গাছকে গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করতেন। তবে প্রায় এক দশক আগে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে চিত্র।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে ভুট্টার আবাদ। গত রবি মৌসুমে ছয় হাজার হেক্টরের উপরে জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়। যা থেকে প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন হয়। এই আবাদের অধিকাংশই পদ্মা নদীর চরাঞ্চল কেন্দ্রিক। আর খরিপ-১ মৌসুমে ৪৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এরই মধ্যে তা দুই হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। আবাদ এখনো চলমান রয়েছে।

সময়ের ধারাবাহিকতায় জেলার চরগুলোতে এখন আর আগের মতো বছরের অধিকাংশ সময় পানির নিচে থাকে না। এখন বছরের তিন থেকে চার মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। তাই বছরের সাত থেকে আট মাস পানি না থাকায় এবং কোথাও কোথাও বিশেষ করে উচু এলাকায় বছরের নয় থেকে ১০ মাস পানি না থাকায় জমি ভেদে এখন বছরে দুই থেকে তিন বার ভুট্টার আবাদ করা হয়ে থাকে। এতে জেলায় বাড়ছে ১২০ দিনের ফসল ভুট্টার আবাদ ও উৎপাদন।

ভুট্টা জমি থেকে তোলার পর বাজারজাত করার প্রক্রিয়া চলছে

কৃষকের দাবি, প্রতি হেক্টরে ১০ টনের অধিক পরিমাণ ভুট্টা উৎপাদিত হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তারা। তারা জানান, কয়েক বছর আগেও ভুট্টা প্রতি মণ পাঁচ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হেক্টর প্রতি চাষাবাদ খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা হলেও গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার ভুট্টা উৎপাদন হয়ে থাকে। এতে অন্য ফসলের তুলনায় যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, গত কয়েক বছরে ভুট্টার নানাবিধ ব্যবহার বেড়েছে। উচ্চ মূল্যের কর্নফ্লেক্স, শিশুখাদ্য, পশুখাদ্য, আটার সাথে মিশিয়ে দেয়া, উন্নত মানের বিস্কুট, ছাতু ও উচ্চ মূল্যের কর্ণওয়েল তৈরিও হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ভুট্টা এমন একটি ফসল যার কোনো অংশই ফেলনা নয়। ভুট্টার গোড়ার অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে, উপরের সবাজ অংশ গো খাদ্য আর ভুট্টার ফল মানুষের খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পশু পাখির খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।'

এদিকে চরের বাসিন্দারা জানান, এক সময় ভুট্টার আবাদকে গুরুত্ব না দিলেও সম্প্রতিকালে ভুট্টার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ভুট্টা আবাদ করছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীও হচ্ছেন তারা। এতে তাদের কর্মসংস্থান বাড়ছে।

যদিও এসব চরের ভুট্টা চাষিরা অভিযোগ করেন, কিছু কিছু ব্যবসায়ীরা চরে গিয়ে ভুট্টা সংগ্রহ করলেও তা সংখ্যা কম। তাই বাজারজাত করতে দূর শহরে নিয়ে আসতে দুভোর্গ পোহাতে হয়। তাই চরেই ভুট্টার বাজার সৃষ্টি করা গেলে চরের মানুষের মধ্যে আবাদের আগ্রহ আরও বাড়বে।