জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে, সঙ্গে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রাও বাড়ছে। জলবায়ুর এল নিনো প্রভাবের কারণে চলতি বছর অন্তত ৫৪টি দেশে বিবর্ণ হবে কোরালের সারি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক এটমোস্ফেরিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, গণহারে চতুর্থবারের মতো পৃথিবীকে কোরাল ব্লিচিং দেখতে হবে।
প্রশান্ত মহাসাগর, ক্যারিবীয়, আটলান্টিক মহাসাগারে কোরালের প্রাচীর ভুতুড়ে সাদা রং ধারণ করতে শুরু করেছে। গেলো বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডা আর ক্যারিবিয়ানের কোরাল বিবর্ণ হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় চলতি বছরই কোরাল ব্লিচিং রেকর্ড করা হয়েছে। কোরাল বিবর্ণ তখনই হয়, যখন সমুদ্রের উষ্ণতা কোরাল প্রাচীর সহ্য করতে পারে না। আর অন্যবারের তুলনায় চলতি বছর দীর্ঘ সময় সমুদ্রে উষ্ণ তাপমাত্রা থাকবে।
কোরাল বিজ্ঞানী ডেভিড ওবুরা বলেন, বিবর্ণ কোরাল মরে যায় না। কোরালের মধ্যে শৈবাল থাকে যখন শৈবালগুলো চিন্তায় পড়ে যায়, তখন কোরাল থেকে সেগুলো আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শৈবাল আবারও কোরালের কাছে ফিরে আসে। এ সময় কোরালের শক্তি কম থাকে। এই চাপ যখন বেশি থাকে কোরাল একেবারেই বিবর্ণ হয়ে যায়। এরপরই কোরালের মৃত্যু হয়।
গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ আর জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি আর কোরাল ব্লিচিংয়ের জন্য দায়ী। সমুদ্রের উষ্ণতায় কোরাল থেকে রং বেরংয়ের শৈবাল টিস্যু থেকে আলাদা হয়ে যায়। পানি শীতল হলে অনেক সময় প্রাণ ফিরে পায় কোরাল। কিন্তু পানি বেশি গরম থাকলে কোরাল মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। সাদা কঙ্কালের মতো কোরালের অংশগুলো ভেঙে পানিতে মিলিয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোরাল প্রাচীরগুলো এরমধ্যেই বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেই কোরালের বাস্তুসংস্থানের জন্য তা ক্ষতিকর হবে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্বের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ কোরাল প্রাচীরই হারিয়ে যাবে।
ইন্টারন্যাশনাল কোরাল রিফ ইনিশিয়েটিভ বলছে, কোরাল প্রাচীর ঘিরে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা লেনদেন হয়। এই প্রাচীর পর্যটক আকৃষ্ট করে, ঝড় মোকাবিলায় সহায়তা করে ও উপকূলীয় জেলেদের মাছ ধরায় সহযোগিতা করে।