দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘবদ্ধ আক্রমণে নাকাল মিয়ানমার জান্তা সম্প্রতি ব্যাপক জনবল হারানোর সঙ্গে সঙ্গে হারাতে শুরু করে একের পর এক সীমান্ত এলাকাও। বাংলাদেশ, চীন আর ভারতের পর চলতি সপ্তাহে হারায় থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণও।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গেলো বৃহস্পতিবার থাই সীমান্তবর্তী মায়াবতী শহর থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সশস্ত্র ক্যারেন বিদ্রোহীদের দাবি, শহরের কাছে একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলার পর প্রায় এক সপ্তাহে আত্মসমর্পণ করেছে ৫০০ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্য। পরের কদিনে মায়াবতীর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে বারবার এগিয়ে এলেও বিদ্রোহীদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রোববার এক ধাক্কায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার পিছিয়ে যায় সেনাবাহিনী। সোমবার শহরে নিজেদের পতাকাও উত্তোলন করে বিদ্রোহীরা।
ক্যারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির লেফটেন্যান্ট স কাও বলেন, 'শত্রুপক্ষ যুদ্ধের মনোবল হারিয়ে ফেলেছে। মায়াবতীর দিকে যারা এগোনোর চেষ্টা করছে, তারা সেনাবাহিনীতে একেবারেই নবীন। যুদ্ধের কিছুই জানে না, এমন সেনাসদস্যরা লড়তে আসছে। অভিজ্ঞ যোদ্ধা হলে আমাদের সঙ্গে লড়তে আসার আগে আরও প্রস্তুতি নিত তারা।'
মায়াবতী মিয়ানমারের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য শহরটি তারল্য সংকটে জর্জরিত জান্তার জন্য অর্থনৈতিকভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। মিয়ানমারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে মায়াবতী হয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১১০ কোটি ডলার। এমন পরিস্থিতিতে মায়াবতীর নিয়ন্ত্রণ হারানো মিয়ানমার জান্তার জন্য বেশ বড় ধাক্কা।
ক্যারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের মুখপাত্র স তাও নি বলেন, 'সেনাবাহিনীর দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে অস্ত্রশস্ত্রে কতোটা এগিয়ে আছে তারা। সে তুলনায় আমাদের কিছুই নেই। কিন্তু তারা মানসিকভাবে দুর্বল। লড়াই শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা আত্মসমর্পণ করে ফেলছে। সেনা অভ্যুত্থানের তিন বছরে এ ধরনের ঘটনা খুব তাৎপর্যপূর্ণ।'
বিদ্রোহীদের ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গেলো অক্টোবর থেকে লড়ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। চীন সীমান্তের কাছে বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া রক্তক্ষয়ী সংঘাতে এ পর্যন্ত দেশজুড়ে পৌনে ২০০ ঘাঁটি ও শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনাবাহিনী।
পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের যোদ্ধা মিও মিন্ত কিয়াও বলেন, 'আমাদের বিপ্লব যে এতোদূর পর্যন্ত এসেছে, এতে আমরা ভীষণ খুশি। সেনাবাহিনীর আরও কিছু ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলেই আমরা লক্ষ্যেও পৌঁছাতে পারবো। আমাদের নেতার হাত ধরে বেশ মসৃণভাবেই এ পথে এগোচ্ছি আমরা, অভিযানের অংশ হতে পেরেও আমরা খুশি।'
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নেতৃত্ব দখল করে দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনী। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের পতনের পর থেকেই টালমাটাল দেশটির রাজনীতি ও অর্থনীতি। বেসামরিক সরকারের দাবিতে দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলন শক্ত হাতে দমন করায় জান্তার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে জনতা, যা পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে সশস্ত্র প্রতিরোধে রূপ নেয়। এই সশস্ত্র প্রতিরোধকেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে রূপ দিয়েছে দেশের বড় অংশের আদিবাসী বিদ্রোহীরা।