অর্থনীতি
কৃষি
0

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করতে হবে চাল

পহেলা বৈশাখ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করতে হবে চাল। তবে চালের প্রস্তাবিত মূল্যের সাথে বর্তমান বাজারদরের কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছেন না চালকল মালিকরা। তার ওপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ১৪ জাতের চালের মধ্যে বাজারে মিলছে না অনেক জাতের চাল।

ধান চাল উৎপাদনের উদ্বৃত্ত জেলা বগুড়া, নওগাঁ এবং জয়পুরহাট। এই তিনটি জেলার খুচরা বাজারে বর্তমান ব্রি-২৮, ২৯, ৪৯ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে। এই তিনটি জাত আমন উফশী এবং বোরো উফশীর মধ্যে পড়ে। আর আমন উফশী জাতের ব্রি ৫১,৫২,৭১,৭৫,৮৭ জাতের চাল, হাট বাজারে কেউ চিনছেন না। এসব জাতগুলো ব্রি-২৮ হিসেবে ভোক্তারা কিনছেন। ১৪ এপ্রিল থেকে এসব জাতের চালের খুচরা মূল্য ধরা হয়েছে ৪৮.৯ টাকা থেকে ৫০.১৯ টাকা। এটিকে অবাস্তব বলছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

খুচরা ব্যবসায়ী একজন বলেন, 'ব্রি-৫২ নামে একটা চাল আছে যা সবাই স্বর্ণা নামে চিনে। এইটা স্বর্ণা-৫ চাল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে।

১৪ এপ্রিল থেকে চালের জাত ভেদে দামের চাট।

হাইব্রিড ধান হিসেবে পরিচিত শংকর জাতের অধিক ফলনশীল ৯৫ ভাগ ধানবীজ বিদেশ থেকে আমদানি করা। এ থেকে যে চাল উৎপাদন হয় তা মাঝারি এবং মোটা। আমন হাইব্রিড হিসেবে ধানি গোল্ড, সাথী, এসিআই-টু মাঝারি গোছের সেই চাল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা । প্রস্তাবিত সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে ৫১.৭১ টাকা। আর বোরো হাইব্রিড হিসেবে মোটা হীরা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দাম রয়েছে ৪৮.১ টাকা। আমন স্থানীয় জাত হিসেবে নাজিরশাল, বালাম, পাইজাম, গাইঞ্জা, হাট বাজারে ৬৫ টাকা বিক্রি হলেও সরকার নির্ধারিত দাম মাত্র ৪৮.১ টাকা। আর স্থানীয় কালী বোরো এবং জাগলী বোরো এ এলাকায় চাষ হয় না। এখানেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত দামের সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছেন না মিল মালিকরা।

মিল মালিকদের একজন বলেন, 'যদি আমাদের মতামত নিতো তাহলে আমরা বাস্তব দেখে বলে দিতাম কোন ধানে কোন চাল এবং দাম কত হবে। বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে এইটা বাস্তবায়ন কোনোভাবে সম্ভব না।'

মিল চাতাল নেতৃবৃন্দ বলছেন ১৪ এপ্রিল থেকে চালের বস্তার উপর জাত, মূল্য, উৎপাদন তারিখ লেখার সরকারি পরিপত্র তারা মেনে চলবেন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চালের দাম নির্ধারণ ব্যাপারে যে প্রস্তাবনা রেখেছেন তা অযৌক্তিক।

নওগাঁ চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, 'উৎপাদনের তারিখ, নাম, মূল্য ভিন্ন সিল আকারে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু সরকার এইটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমরা বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবো।'

বগুড়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি এ টিএম আমিনুল ইসলাম বলেন, 'এইটা অবাস্তব। বাজার কখনো নির্ধারিত মূল্যে যাওয়া যায় না। এইটা বাস্তবায়ন হবে না। বাজার বাড়বে কমবে এবং বাজার চলবে তার গতিতে।'

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাম নির্ধারণ সম্পর্কে কিছুই জানেন না খাদ্য বিভাগ। চালের বস্তার উপর মিলগেটের দাম লেখাসহ কিছু তথ্য সংযোজনের ব্যাপারে কাজ করছে খাদ্য বিভাগ।

নওগাঁ জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভীর রহমান বলেন, 'নাম, ঠিকানা ও মিলগেটের তারিখ এইগুলো সিল আকারে লিখতে হবে বস্তার উপরে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে যতটুক নির্দেশনা আছে আমরা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি।'

মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বোরো ধান উঠতে শুরু করবে বগুড়া জেলায়। ইতোমধ্যে কৃষকের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এ বছর কৃষকের বোরো চালে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছে ৩৯.১৭ টাকা। আর সরকারিভাবে ক্রয়ের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে ৪৬ টাকায়।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর