উত্তরের ঈদযাত্রায় নেই চিরচেনা ভোগান্তি। গাজীপুর-এলেঙ্গা ৪ লেন রাস্তার সুবিধায় স্বস্তিতে ঘরে ফিরছে মানুষ। গতকাল (সোমবার, ৮ এপ্রিল) বিভিন্ন কলকারখানা ছুটি হওয়াতে মধ্যরাত পর্যন্ত যানবাহনের জট থাকলেও আজ (মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল)সারাদিন অনেকটা নির্বিঘ্নেই ঢাকা ছেড়েছে পরিবহনগুলো।
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার চন্দ্রায় দেখা গেছে ধীর গতিতে যানবাহন চলাচলের দৃশ্য। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা এবং লেন না মানায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। অন্যদিকে পরিবহন সংকট আর কিছুটা সাশ্রয়ের আশায় অনেকে ট্রাকে চেপেই রওয়ানা হয়েছেন গন্তব্যে।
একজন যাত্রী বলেন, 'গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু ভাড়া বেশি। আগে যে ভাড়া ৪০০ টাকা ছিল, সেটা এখন এক হাজার টাকা চাচ্ছে। বাসে গেলে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা লাগবে। সেজন্য ট্রাকে যাচ্ছি, এখানে ৩০০ টাকায় যেতে পারবো।'
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল গ্রহণে ধীর গতির ফলে ভোগান্তিতে পড়ে সেতু পার হওয়া যানবাহনগুলো। যানবাহনের চাপ বাড়ায় গেলো ৩৬ ঘন্টায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার টোল আদায় করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ট্রেনেও দেখা গেছে ঘরে ফেরার তাড়া। এই তাড়াহুড়ো শেকড়ের টানে ফিরে যাওয়ার। প্রিয়জনের সাথে ঈদ আনন্দে মেতে ওঠার।
কমলাপুর স্টেশনে ঢোকা মাত্রই চিত্রা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার প্রাণান্ত চেষ্টা। অপেক্ষা শেষে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনে যে যেভাবে পারছেন উঠছেন।
ঈদযাত্রার সপ্তম দিনে কমলাপুরের প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। রাজধানী থেকে বেশিরভাগ ট্রেনই সময়মতো ছেড়ে গিয়েছে। যাত্রীদের চোখেমুখেও ছিল স্বস্তির ছাপ।
একজন যাত্রী বলেন, 'ঈদে বাড়ি যাবো, কুব ভালো লাগছে। বাড়িতে সবার সাথে ঈদ করতে পারবো। অনেক পর বাড়িতে যাচ্ছি সেজন্য এই কষ্ট কোনো কষ্ট মনে হচ্ছে না।'
তবে বিনা টিকিটের যাত্রীও ছিল চোখে পড়ার। এর ফলে টিকিটধারী অনেক যাত্রী তাদের নির্ধারিত আসন পর্যন্ত পৌঁছাতে হিমশিম খান।
মঙ্গলবার সকাল-দুপুরে ট্রেনের ছাদে যাত্রী দেখা গেলেও বিকেলের পর থেকে রেল কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় ছাদে আর যাত্রী উঠতে পারেনি। এদিকে ১০ তারিখ ঈদ না হওয়ায় বন্ধ রাখা আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে বিক্রি শুরু হয়। অনলাইন ও অফলাইনে বুধবার (১০ এপ্রিল) ও ঈদের পরদিন শুক্রবারের (১২ এপ্রিল) টিকিট কাটতে পারবেন যাত্রীরা।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, 'আজকে টিকিট ছাড়ার সাথে সাথেই আধা ঘণ্টার মধ্যে টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। টিকিটের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।'
মঙ্গলবার নৌপথে ঈদযাত্রায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। লঞ্চ পন্টুনে ভিড়তেই যাত্রীদের উঠবার তাড়া।
তবে মানুষের চাপ থাকলেও তেমন বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েনি এবার। ঘরমুখো মানুষ সহজেই উঠতে পারছে লঞ্চে।
সারাবছর যাত্রী খরার কারণে ক্ষতি এই ঈদে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার প্রত্যাশা লঞ্চ মালিকদের। মঙ্গলবার দিনব্যাপী দেড় শতাধিক লঞ্চে নৌপথে ঢাকা ছাড়েন প্রায় পৌঁনে ২ লাখ যাত্রী।