দেশের সর্ব দক্ষিণের দ্বীপজেলা ভোলা। মূল ভূখণ্ডের বাইরেও যেখানে রয়েছে অর্ধশতাধিক ছোট বড় দ্বীপচর। তাতে কৃষকরা নানা ধরনের ফসল ফলিয়ে সচল রেখেছেন কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি।
চরের উর্বর জমি ও আবহাওয়া গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির উপযোগী হাওয়ায় প্রতিবছরই ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচ, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, তরমুজসহ নানা জাতের ফসল আবাদ হচ্ছে। ফলন আশানুরূপ হলেও দাম নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ।
এই যেমন মেঘনার বুকে জেগে উঠা মাঝের চর গ্রামের কৃষক ইউসুফ। এ বছর ২৪ শতাংশ জমিতে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ করে ক্যাপসিক্যাম চাষ করেছেন। ফলন ভাল হলেও খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি।
ইউসুফ বলেন, 'এবার ক্যাপসিক্যাম কেজিতে খরচ হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায়। একেকটা ঠিকভাবে উঠাতে ৫ থেকে ৬ জন লোক লাগে। ঢাকায় যেভাবে বিক্রি হয় সেভাবে আমাদের অনেক লস হয়।'
মাঝের চর গ্রামের কৃষক ইউসুফ জমি থেকে ক্যাপসিক্যাম উঠাচ্ছেন। ছবি: এখন টিভি
কৃষকরা বলছেন, এক কেজি ক্যাপসিক্যাম উৎপাদনে খরচ ২২ থেকে ২৫ টাকা। সঙ্গে আছে পরিবহন ব্যয়। অথচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। যদিও একই ক্যাপসিক্যাম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও লোকসানে প্রান্তিক কৃষকরা।
তবে সিন্ডিকেট অস্বীকার করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, চরাঞ্চলের কৃষিপণ্য শহরে আসতে পরিবহন বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হয়। এছাড়া, পথে পথে চাঁদাবাজিতে বাড়ে দাম।
ভোলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, 'আমরা কোনো সিন্ডিকেট করে বিক্রি করছি না। আমাদের গাড়ি ভাড়া বেশি লাগে। বিন্নি জায়গায় টোল দেয়া লাগে। চাঁদা দেয়া লাগে।'
কৃষি বিভাগ বলছে, শুধু চরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন ফসল উৎপাদন হয়েছে ৫২ হাজার ৫০০ টন । যার বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কাজ চলছে বলে জানান কর্মকর্তারা। একইসাথে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিপণন ব্যবস্থায়।
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসান ওয়ারেসুল কবীর বলেন, 'কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে একটা প্রজেক্টের আওতায় বাজার মনিটরংয়ের উপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। তারা কীভাবে বাজারে পণ্র বিক্রি করবে সে বিসয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। '
এ বছর জেলায় শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৬৯ হেক্টর জমিতে। যেখানে উৎপাদন হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৩০০ টন ফসল।