প্রায় দেড়'শ বছর আগে জমিদারদের জন্য তৈরি হতো ব্যতিক্রমী মাষকলাইয়ের আমৃতি। এখনও ঐতিহ্যবাহী সেই মিষ্টান্ন তৈরি করে শেরপুরের ঘোষপট্টির দোকানগুলো। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ যেন জমেই না এই আমৃতি ছাড়া। তাই এই রমজানে ঘোষপট্টির মিষ্টির দোকানগুলোতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমৃতিসহ মিষ্টি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।
কীভাবে তৈরি হয় এই খাবার?
কারিগররা বলছেন, আমৃতি তৈরি করতে প্রথমে মাষকালাইয়ের ডাল ধুয়ে দীর্ঘ সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর মেশিনের সাহায্যে মিহি করে দীর্ঘক্ষণ হাতে নাড়তে হয়। পরে পাতলা কাপড়ে নিয়ে গরম তেলে ভাজা হয় জিলাপির মত। এরপর ছেড়ে দেয়া হয় চিনির সিরায়। কিছুক্ষণ রাখলেই তৈরি হয়ে যায় মচমচে রসালো মাষকালাই এর আমৃতি।
একজন কারিগর বলেন, 'ঢাকা থেকে কালাই নিয়ে এস মেশিনে ফেটতে হয়। এরপর আবার হাতে ফেটে তেলে ছেড়ে দেয়া হয়। তেলে ভেজে তারপর বিক্রি করতে হয়।'
বর্তমানে রমজানেই সবচেয়ে বেশি কদর ও চাহিদা থাকে মাষকালাইয়ের আমৃতি'র। প্রতিদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে এই মিষ্টান্ন তৈরির কাজ। গরম মজাদার এই মিষ্টি কিনতে প্রতিদিন ভিড় করেন ক্রেতারা।
একজন বিক্রেতা বলেন, 'আমাদের প্রতিদিন বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ কেজি। এবং ক্রেতা বেশি হলে ৫ কেজি এদিক সেদিক হতে পারে। এ এক মাস এটা বেশি তৈরি করি।'
শেরপুর ছাড়াও আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে এই আমৃতি'র। বিভিন্ন জেলা থেকে মাষকালাইয়ের আমৃতি কিনতে আসেন ক্রেতারা।
একজন ক্রেতা বলেন, ' ইফতারের সময় এটা খুব ভালো লাগে। প্রথম দিন নেয়ার পর থেকেই খুব ভালো লেগেছে এটা আমার কাছে। মুখরোচক একটা খাবার।'
ইফতারে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে রসালো এই মিষ্টান্ন। মাষকালাই ডালের এই আমৃতি ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে বা সরকারিভাবে স্বীকৃতি পেলে শেরপুর জেলার নাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
শেরপুর জেলা সুইট মিট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শম্ভুনাথ ঘোষ বলেন, 'আমরা নিয়মিত এটা বিক্রি করছি। রমজানে এটার বিক্রি বেশি হয়। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলে আমাদেরও উন্নতি হবে। সাথে শেরপুরকে সারাবিশ্বে চিনবে।'
জেলায় প্রায় ১৭টি দোকানে মাষকালাই ডালের জিলাপি তৈরি হচ্ছে। আর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ মণ আমৃতি বিক্রি হয়।